ডেঙ্গুজ্বর হলে কী খাবেন (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),স্বাস্থ্য প্রতিনিধি ,শনিবার, ০৮ জুলাই ২০২৩ : দেশব্যাপী বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগের বড় সমস্যা হলো প্লেটলেট কমে যাওয়া। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কারও কারও খুব দ্রুত প্লেটলেট কমে যায়। এ অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য গ্রহণ। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য ডায়েটে থাকতে হবে যেসব খাবার-

* প্লেটলেটের মাত্রা বাড়াতে

পেঁপে, পালং শাক, কুমড়া, গাজর, সেলারি, ব্রকলি, বিট, ক্যাপসিকাম, পেঁপে পাতা প্লেটলেট বাড়াতে সহায়তা করে।

* পানিশূন্যতা এড়াতে

জ্বরে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। পানির পরিমাণ বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর ডেঙ্গু রোগীকে তরল খাবার দেওয়া যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে যে তরল খাবারগুলো উপকারী তা হলো- দুধ, ডাবের পানি, পেঁপের রস, কমলা রস, ডালিম রস, লেবুর শরবত, মাল্টার জুস, ফ্রেশ জুস, স্যুপ ইত্যাদি।

* রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে

ডেঙ্গু রোগীদের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়াতে আয়রন, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। কলিজা, ডিমের কুসুম, মাছ, কচুশাক, পালংশাক, খেজুর, আনার, লাল ড্রাগনফল, কলা, স্ট্রবেরি, গাজর, টমেটো, কচু, লতা, ব্রকলি, সাইট্রাস ফল, লেবু, পেয়ারা, আমলকী, মরিচ ইত্যাদিতে খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন-সি থাকে এবং দুধ, ডিম, বাদাম, বিচি, গরুর মাংস, কলা ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন-বি থাকে, যা হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়াতে সহায়তা করে।

* জ্বরে দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে প্রোটিন

প্রোটিন ক্ষয় পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। উৎস। লিন প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও টিস্যু দ্রুত সুস্থ হওয়া তথা নতুন টিস্যু তৈরিতে সহায়তা করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মটরশুটি, ছোলা, মসুর ডাল, ডিম, মাছ, কলিজা, দুধ, দই, কাজুবাদাম প্রোটিনের ভালো উৎস।

* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মূলত মানুষের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় এবং জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। পালংশাক, রঙিন বাঁধাকপি, ব্রকলি, টমেটো, বিট, সবুজ শাকসবজি, লাল আঙ্গুর, সবুজ-চা, ডার্ক চকলেট, তাজাফল ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়াতে সহায়তা করে। তা ছাড়া প্রোবায়োটিক মূলত শ্বাসযন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটিন্যাল বা পেটের সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। এটি শরীরে অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। প্রোবায়োটিক পাওয়া যায় যেসব খাবারে তা হলো- দই, দধি, টকদই, চিজ, গাঁজনকৃত বাঁধাকপি, বোরহানি, আচার ইত্যাদি।

সাইট্রাস খাবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে। যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা ইত্যাদি। তা ছাড়া রসুন, হলুদ, আদা, ভেষজ চা, লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

Advertisement

 

* টিপস

▶ আদার পানি-বমি ভাব কমায়, এতে ডেঙ্গুর প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও তরল রয়েছে।

▶ জ্বরের সময় গোসল করা কেবল আরামদায়ক নয় বরং শরীরের তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।

▶ পেঁপে পাতা, থানকুনি পাতা, নিম পাতা, ছাগলের দুধ ডেঙ্গুজ্বরে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।

▶ জ্বরের সময় কম মসলায় রান্না করা নরম ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত।

▶ সবসময় ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও ঘুমের সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত।

* সতর্কতা

ডেঙ্গুজ্বর হলে অবশ্যই তৈলাক্ত খাবর, ভাজা খাবার, মসলাযুক্ত খাবার, ক্যাফিনযুক্ত ও কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এ খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ধরনের খাবার খেলে হজমে ও পাকস্থলীতে সমস্যা হতে পারে। ডেঙ্গু রোগে খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সেবন করা জরুরি।

Advertisement

লেখক : পথ্য-পুষ্টিবিদ, সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান ও ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট এবং বিভাগীয় প্রধান, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড, ঢাকা।