ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : ছড়িয়ে পড়েছে ‘গোপনীয়’ তদন্ত প্রতিবেদন, আতঙ্কে সাক্ষীরা(ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ :সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি তদন্তে আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন, শাখা ছাত্রলীগ ও হাইকোর্ট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে হল, বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

Advertisement

তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের কপি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনের শুরুতেই রয়েছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্তকালীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতকারী সাক্ষীদের নাম। অভিযুক্তদের হাতেও পৌঁছেছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সাক্ষ্যদানকারীরা।

জানা যায়, পাঁচদিন আগে ফুলপরি নির্যাতনে মূল অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের কয়েকটি পৃষ্ঠা। মূলত এরপর থেকেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপেও ঘুরে বেড়াচ্ছে তদন্ত প্রতিবেদনটি। এ দিকে সাক্ষীদের নাম গোপন রাখার শর্তে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলেও তাদের নাম এখন অভিযুক্তদের কাছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের থেকে সাক্ষীদের নাম-পরিচয় গোপন রাখার নির্দেশনা থাকলেও বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে। কীভাবে ছড়িয়ে পড়লো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এ ছাড়াও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে চক্রটি। নির্যাতনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে অভিযুক্তদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছিলো চক্রটি।

Advertisement

এ দিকে নাম প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন সাক্ষীরা। অজানা আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন একাধিক সাক্ষী। তারা বলেন, ‘তদন্ত চলাকালীন বলা হয়েছিল সাক্ষীদের নাম গোপন রাখা হবে। কিন্তু এখন বিষয়টা সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা অজানা আশঙ্কায় রয়েছি। এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফলতি রয়েছে। এখন জানি না আমাদের কি হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সাক্ষী বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিটির কাছে জাস্ট সত্যটা তুলে ধরেছি। বলা হয়েছিল আমাদের নাম কোনোভাবে প্রকাশ করা হবে না। কিন্তু এভাবে সাক্ষীদের নাম প্রকাশ করলে ভবিষ্যতে চোখের সামনে কোনো অন্যায় ঘটলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিতে সাহস করবে না। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে এসব নথি পাওয়া যায়। আমি এটা হাইকোর্ট থেকে সংগ্রহ করেছি।’

তবে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে এটা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

Advertisement

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, ‘আমরা পাঁচজন বসে সিলগালা করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে এটি হয়নি এটা আমি নিশ্চিত। কারণ আমরা তদন্ত কমিটিতে কাজ করেছি ,আমাদেরও তো একটা নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কীভাবে সবার কাছে ছড়িয়ে পড়েছে এটা আমরা জানি না। তবে আমাদের কাছ থেকে এটি কোথাও যায়নি। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সবকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।