ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩ : অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে তিনবার চাকরিচ্যুত হন। একটি সিএ ফার্ম থেকে আত্মসাৎ করেন গ্রাহকদের প্রায় ৯ কোটি টাকা। অন্তত সাত বছর জেল হওয়ার কথা থাকলেও জামাল উদ্দিন নামের সেই ব্যক্তিকে ২০১৯ সালে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়। তার আমল থেকেই একসময় সর্বোচ্চ মুনাফায় থাকা ব্যাংকটিকে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ধার করে চলতে হচ্ছে।
Advertisement
শুধু জনতা ব্যাংক নয়, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, আইপিডিসি ফ্যাইনান্স লিমিটেড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চাকরিচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠিত ইমার্জিং রেটিং এজেন্সির নাম করেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে জামাল উদ্দিনের।
তথ্যমতে, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনারে থাকা জামাল উদ্দিন ওই কোম্পানির নামে এক্সিম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে দুই বছরে কোম্পানির অগোচরে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেন করেন।
হুদা ভাসির কর্তারা জানান, শুধু এক্সিম ব্যাংক নয়, তাদের অগোচরে ঢাকার মৌলভীবাজারের উত্তরা ব্যাংকেও ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলেন জামাল উদ্দিন। সেখানেও গ্রাহকদের প্রতারিত করে হাতিয়ে নেন প্রায় ৪ কোটি টাকা। অথচ, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কিছুই জানতে না।
Advertisement
জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম প্রমাণিত হওয়ায় হুদা ভাসি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও হুদা ভাসি লিখিত অভিযোগ করলে সেই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কোম্পানির বেশির ভাগ টাকাই ফেরত দেননি তিনি।
জামাল উদ্দিনের কীর্তি এখানেই শেষ না, ২০০০ সালে আইপিডিসি ফ্যাইনান্স লিমিটেড থেকেও চাকরি হারান। মাত্র দুই বছরের মাথায় চাকরি হারানোর কারণ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কর্তব্যক্তিরা। তবে, ওই সময়ে জামাল উদ্দিনের সিনিয়র হিসেবে কর্মরত মশিউল আলম চাকলাদার নামে একজন জানান, সিনিয়ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপেশাদার আচরণের কারণে চাকরি হারাতে হয় জামাল উদ্দিনকে।
অথচ, এমন একজনকেই ২০১৯ সালে জনতা ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদের জন্য মনোনিত করা হয়। সেখানেও জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। নিজে পরিচালকের পদে থাকা ইউনিক পাওয়ার হাউসকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবনা দেন। এ যাত্রায় আর সুবিধা করতে পারেননি, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় জনতা ব্যাংকের ইতিহাসে মাত্র ১১ মাসের মাথায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক একসময় বছরে আয় করতো হাজার কোটির ওপরে, কিন্তু এখন প্রতিদিন ধার করে চলতে হচ্ছে। খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। ২০১৩ সালেও জনতা ব্যাংকের নিট আয় ছিল ৯৫৫ কোটি টাকা। জামাল উদ্দিনদের আমলে ব্যাংকটির আয় গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ কোটি টাকারও নিচে।
Advertisement
এ ছাড়া জামাল উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত ইমার্জিং রেটিং এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। যার কাজই হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ শোধ করার সক্ষমতা যাচাই করে রেটিং করা। যা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। অথচ এমন এক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকেই দেওয়া হয়েছিল ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।