ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩ : ভারতের ওড়িশার বলেশ্বরে ভারতের ইতিহাসে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবারের ওই রেল দুর্ঘটনায় ২৭৫ জন নিহত এবং এক হাজার ১৭৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মধ্যে ৭৯৩ জনকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
Advertisement
এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরা থেকে বেঁচে ফিরেছেন তিন বাংলাদেশি যাত্রী। তারা চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাচ্ছিলেন। ওই ট্রেনে বাংলাদেশি আরও যাত্রী ছিলেন, তাদের খোঁজ চলছে।
মো. মিনহাজ উদ্দিনসহ বেঁচে ফেরা অন্যরা হলেন, মোছা. আজমিন আক্তার ও মো. হুমায়ুন কবির। সবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ১০ জনের বেশি বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন। আর হামসাফার এক্সপ্রেসে ছিলেন বেশ কয়েকজন। উড়িষ্যার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাত জন বাংলাদেশি যাত্রী।
করমণ্ডল ট্রেনে থাকা বাংলাদেশি যাত্রী ময়মনসিংহের মিনহাজ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর বহু কষ্টে রেলের কামরার কাঁচ ভেঙে বের হন তারা। বাইরে এসে দেখেন বীভৎস ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত লাশের সারি। পরে উদ্ধার কাজে হাত দেন। মৃতদেহের নিচে চাপা পড়া জীবিতদের উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেন হাসপাতালে।
ওই ট্রেনের শনাক্ত হওয়া প্রথম বাংলাদেশি যাত্রী মিনহাজ আরও জানান, ভোর পর্যন্ত উদ্ধারকারীদের সঙ্গে উদ্ধারের কাজ করার পর তাকেও হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
Advertisement
মিনহাজ জানান, চেন্নাইয়ে চিকিৎসার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বর্তমানে তিনি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উড়িষ্যার বাহানাগা বাজার স্টেশনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও হামসাফার এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার বীভৎসতা এখনো ভুলতে পারেননি মিনহাজসহ তিন বাংলাদেশি। বিদেশে চিকিৎসা করাতে এসে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তা কল্পনা করতে পারেননি তারা।
শুধু এই তিনজন নন, করমণ্ডল ও হামসাফার এক্সপ্রেস ছিলেন আরও বেশ কিছু বাংলাদেশি যাত্রী। তাদের খোঁজ এখনও পায়নি বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন।
এদিকে রেলওয়ে বোর্ডের সিগন্যালিংয়ের প্রধান নির্বাহী পরিচালক সন্দীপ মাথুর এবং অপারেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্টের সদস্য জয়া বর্মা সিনহা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানিয়েছেন।
Advertisement
তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, দুর্ঘটনার সময় করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘গতি বেশি ছিল না’ এবং একটি লুপ লাইনে প্রবেশের জন্য এটি সবুজ সংকেত পেয়েছিল, যেখানে একটি পণ্যবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল।
তাদের মতে, ইন্টারলকিং (সিগন্যাল) সিস্টেমের কার্যকারিতা প্রাথমিকভাবে সমস্যার অংশ ছিল, যা দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে হচ্ছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জন্য রুট ও সিগন্যাল নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সিনহা বলেন, সবুজ সংকেত মানে যেকোনো উপায়ে ড্রাইভার জানেন যে, তার সামনের পথ পরিষ্কার এবং তিনি তার অনুমোদিত সর্বোচ্চ গতিতে এগিয়ে যেতে পারেন। এই বিভাগে অনুমোদিত গতি ছিল প্রতি ঘণ্টা ১৩০ কিলোমিটার এবং তিনি তার ট্রেনটি ১২৮ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চালাচ্ছিলেন যা আমরা লোকো লগ থেকে নিশ্চিত করেছি।
তিনি যোগ করেন, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতি ঘণ্টায় ১২৬ কিলোমিটার বেগে চলছিল। দু’টি ট্রেনের কোনটিই অতিরিক্ত গতিতে চলছিল না। প্রাথমিক অনুসন্ধান বলছে, সেখানে সংকেতজনিত সমস্যা ছিল।
সিনহা আরও বলেন, দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র একটি ট্রেনই জড়িত ছিল, সেটি ছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সাথে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয় এবং এর বগিগুলো পণ্যবাহী ট্রেনের উপরে চলে যায়। পণ্যবাহী ট্রেনটি লোহা-আকরিক বোঝাই ট্রেন ছিল এবং ভারী ছিল। ফলে সংঘর্ষের পুরো প্রভাব যাত্রীবাহী ট্রেনের ওপর পড়েছিল।