ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, রোববার, ০৪ জুন ২০২৩ : ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা তিনশ’ ছুঁই-ছুঁই। এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ চিকিৎসাধীন আটশ’র বেশি যাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই জখম গুরুতর। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
Advertisement
দেশটির রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উদ্বৃত করে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮৮ জন নিহত হয়েছেন। আর, আহতের সংখ্যা ৮০৩ জন। গেলো ২০ বছরে এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা।
রোববার সকালে ভরতের দক্ষিণ-পূর্ব রেল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বালেশ্বরের দুর্ঘটনাস্থলে মেরামতির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। লাইনের উপর থেকে সরানো হয়েছে ট্রেনের বগিগুলো। সেই সঙ্গে চলছে রেললাইন সারানোর কাজও।
ঘটনাস্থলে কাজ করছে রেলের তিনটি মালগাড়ি এবং ক্রেন। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে, দুর্ঘটনার স্থান পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে, মঙ্গলবারের আগে রেল চলাচল স্বাভাবিক হবার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশটির রেলমন্ত্রীর আশা, বুধবার সকালে চালু হবে লাইন।
রেলওয়ে মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ওড়িশার বালেশ্বরে মেরামতির কাজ চলছে। ১০০০ জনের বেশি ব্যক্তি বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছে। উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে, ভারতের বিমান বাহিনী। মৃতদেহ সরানোতে উড়োজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার দুর্ঘটনাস্থল থেকে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। দ্রুতই পাওয়া যাবে প্রতিবেদন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য, বুধবার সকালের মধ্যে লাইন মেরামতির কাজ শেষ করা, যাতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
Advertisement
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাহানগা স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িকে ধাক্কা দেয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের ২৩টি কামরার মধ্যে ১৫টি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে। তখন তাতে এসে সজোরে ধাক্কা মারে হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেস।
রেলওয়ে জানিয়েছে, ত্রিমুখী দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগন্যালের ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা। রেলমন্ত্রী বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। ‘দুর্ঘটনার মূল কারণ শনাক্ত করা গেছে, শিগগিরই সেটি সবাইকে জানানো হবে।
এদিকে, ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালেও যেন চলছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। বিশেষ করে বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। চারপাশে রোগী ও স্বজনদের আর্তনাদ। কারও ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে, কারও ঠাঁই হয়েছে শয্যায়। নার্স, চিকিৎসকরা ছুটে বেড়াচ্ছেন সেবা নিশ্চিতে।
হাসপাতালটি দাবি, শুক্র থেকে শনিবারের মধ্যে ৫২০ জন আহত যাত্রীকে ভর্তি করানো হয়। আহত যাত্রীদের চিকিৎসার জন্য শয্যাও বাড়ানো হয়েছে। বালেশ্বর জেলা হাসপাতালই নয়, আহতদের ভর্তি কর হয়েছে সোরো, ভদ্রক, জাজপুর ও কটকের এসসিবি মেডিক্যালেও।
বালেশ্বর জেলা সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. মৃত্যুঞ্জয় মিশ্র বলেন, আমার পেশাগত জীবনে আচমকাই এমন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। হঠাৎ একসঙ্গে ২৫১ জন আহত যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হল। আমরা কোনও রকম প্রস্তুতই ছিলাম না।
Advertisement
তিনি বলেন, দিশাহারা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তখন। তবে হাসপাতালের সব কর্মী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারা রাত ধরে আহতদের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন। যাঁদের সামান্য চোট ছিলো, তাঁদের প্রথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।