ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আদালত প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩ :২০১৫ সালে নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারাদেশে। জাতির প্রত্যাশা ছিল ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ হবে। তবে আদালতে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আট বছরেও শেষ হয়নি বিচারিক কার্যক্রম।
Advertisement
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পরের বছর কামাল নামে এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে মামলার তদন্ত সংস্থা ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরের বছরের জুন মাসে আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আগামী পহেলা বৈশাখের আগে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।
Advertisement
বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে সেদিন কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করলে বিচারক ২৪ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে গত ছয় ধার্য তারিখে কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হয়নি। এ মামলায় সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার https://www.jagonews24.com/law-courts/news/847463
২০১৫ সালের ওই ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।
Advertisement
২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।
২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
Advertisement
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় সাক্ষী করা হয় ৩৪ জনকে।
এ বিষয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। আশা করছি আগামী নববর্ষে মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য আপনাদের ফোন দিতে হবে না। এর আগেই মামলাটি শেষ করা হবে।
Advertisement
আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমার আসামি কামাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাতজন সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের জেরা করা হলে আমার আসামির বিষয় নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করতে পারে না। মামলাটি দ্রুত নিষ্পতি হোক আমি আশা করছি। মামলায় কামাল খালাস পাবেন।