ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩ : ভোটের বাকি আর নয় মাস। ভোট এলেই আলোচনায় আসে জোট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষেও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জোট সংক্রান্ত তোড়জোড়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বেই বরাবর প্রধান দুটি জোট লড়াই করে। এবার ক্ষমতাসীন জোটে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে অনেকে। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সমমনাদের নিয়ে নির্বাচনী জোট করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। এটা মোটামুটি স্পষ্ট যে বড় হচ্ছে আওয়ামী জোটের কলেবর।
Advertisement
২০২৪ সালের প্রথমে ভোট ধরেই এগোচ্ছে সব কর্মকাণ্ড। এরই মধ্যে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। সব আসনে ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছে তারা। নির্বাচন কমিশন চায়, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত।
জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনে এলে সমমনাদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট করে ভোট করার চিন্তা আওয়ামী লীগের। এরই মধ্যে এ নিয়ে চলমান কার্যক্রমে বেশ অগ্রগতি চোখে পড়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের আদর্শিক জোট ১৪ দলের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে অনেকের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আবার ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গেও অনেকের বৈঠক হচ্ছে। সরকারের মুখপাত্র ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও বেশ কয়েকটি ইসলামিক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
Advertisement
তিন মাস আগে (২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সপরিবারে সাক্ষাৎ করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গণভবন থেকে ‘এটিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ’ এবং কাদের সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে ‘পারিবারিক বিষয়’ দাবি করলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার খোরাক জোগায় সে সময়। আওয়ামী লীগ থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়া কাদের সিদ্দিকী এখন কাছে ভিড়ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। ওই সাক্ষাতের পর থেকে সরকারের কট্টর সমালোচক কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য ও কার্যক্রমে ইতিবাচক মনোভাব ফুটে উঠেছে। অনেকের ধারণা, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী জোটে কাদের সিদ্দিকীর দলও থাকবে।
গণভবনের একটি সূত্র জানায়, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাদের সিদ্দিকীর মেয়েদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং তাদের নানান পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে মনে হচ্ছে, কাদের সিদ্দিকীর মেয়েকে রাজনৈতিক অঙ্গনে চান প্রধানমন্ত্রী।
Advertisement
এদিকে, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট নামে একটি দল ১৪ দলীয় জোটে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে। সম্প্রতি, জোট সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে তারা সাক্ষাৎও করেছে। এ নিয়ে জোটের বৈঠকে আলোচনা উঠলেও নাকচ হয়। তাদের জোটে নেওয়ার বিরোধিতা করেন অনেকে। তবে আওয়ামী ঘরানার লোকদের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট ভোটের সময় আওয়ামী জোটে থাকবে এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ দলটির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী চাঁদপুরের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য রেখেই রাজনীতি করছেন।
১৪ দলীয় জোট নেতাদের বৈঠক/ফাইল ফটো
এছাড়াও সম্প্রতি (রমজানে বা তার আগেও) সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ইসলামী ঐক্যজোটসহ বেশ কয়েকটি দলের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করার বিষয়ে কথা বলেছেন। তাতে মনে হয়েছে, ওই দলগুলোর আগ্রহের সঙ্গে সরকারেরও সমর্থন আছে।
গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের ইফতারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে ইসলামী দলগুলো আমাদের সঙ্গে ছিল, তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। তাতে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা ও আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করার পথ আরও সুগম হবে।’
Advertisement
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্বাচনী জোট নির্ভর করবে। তবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তির আদর্শিক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’
১৪ দলের নেতা ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৪ দল তো একটা আদর্শিক জোট, এখানে ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব সবাই নাকচ করে দিয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য বৃহৎ জোট হতে পারে। বা অবস্থাভেদে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৪ দল সম্প্রসারণের বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই। কোনো দল ১৪ দলে আসতে চায়, এমন প্রস্তাবনাও পাইনি। তবে একটি ইসলামিক দল ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা করেছেন, জানি।’
Advertisement
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম দলগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয় ২০০৩ সালের শেষ দিকে। সে সময় কিছুদিন যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের পর ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ২৩ দফা লক্ষ্য ও কর্মসূচির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ, ১১ দলীয় জোট, জাসদ ও ন্যাপকে নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়। যদিও গঠনের সময় থেকেই এ জোটে এসেও আসেননি বা বেরিয়েও গেছেন অনেকে।