ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,রোববার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩ : ছয় টাকার ডাক টিকিটে স্থান পায় প্রাচীন একটি মসজিদ। নির্মাণ কাঠামোর ফলে কোনো জানালা ছাড়াই সে মসজিদের ভেতর প্রাকৃতিকভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আজও স্থাপত্যবিদ্যা অঙ্গনে মসজিদটির নির্মাণশৈলী নিয়ে আলোচনা হয়। বলছি, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের দড়গাবাড়ির প্রায় ৫৪০ বছর বয়সী বাবা আদম মসজিদের কথা।
Advertisement
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এ বাবা আদম মসজিদ। বেশ কয়েকটি কারণে অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শনের চেয়ে এ মসজিদ পুরোপুরি আলাদা। পর্যটকদের কৌতূহলে থাকা এ মসজিদের আদ্যোপান্ত নিয়েই আজকের আয়োজন।
Advertisement
Advertisement
মসজিদের পূর্ব দেয়ালে ৩টি দরজা রয়েছে। মাঝখানেরটা অন্য দুটির চেয়ে প্রশস্ত। তবে বর্তমানে খোলা থাকছে মাঝখানেরটি। কোনো রকম জানালা ছাড়াই মসজিদের ভেতরের সহনীয় তাপমাত্রার বিষয়টি আজও বিস্ময়কর। মসজিদটি নির্মাণের সময় ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি মাপের লাল পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের চারকোণে ৪টি টারেট রয়েছে। যা অষ্টাভূজাকৃতির। এবং ভেতরের মেহরাব বেশ অলংকৃত করা।
মসজিদের পশ্চিম দিকের বাড়িতে বাসিন্দা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মিলন জানান, অনেকের ধারণা জানালাবিহীন মসজিদ হতেই পারে না। হয়তো পরে এটি আটকে দিয়েছে। কিন্তু বহু বছর আগে বড় বড় মেশিনপত্র এনে বিদেশি একটি বিশেষজ্ঞদল এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, মসজিদটির মূল নকশাই জানালাবিহীন। এ পুরো মসজিদে পোড়া মাটির ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে চুন, সুরকি আর তেঁতুলের পানি। প্রায় ৫৪০ বছর আগে তৈরি ভবনে এখনো সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করা যাচ্ছে।
Advertisement
ইতিহাসের চোখে বাবা আদম মসজিদ:
পর্যটকদের দাবি পুরোনো কম্পাউন্ডটিই যথাযথভাবে পরিকল্পনা মাফিক যত্ন করা হলে পুরাকীর্তিটি পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে। এতে দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়বে।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতবর্ষ প্রত্ন জরিপ বিভাগ ১৯০৯ সালে মসজিদটি সংস্কার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। পরে ১৯৪৮ থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এ স্থাপনার তত্ত্বাবধায়ন করছে। কিন্তু সাইনবোর্ড টাঙিয়েই যেন খালাস। মসজিদটি সংস্কার সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেই। পরে ১৯৯১ সালে লোহার সীমানা দেয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। এই পর্যন্তই শেষ।
মসজিদটির পেশ ইমাম মাওলানা মাহবুবুর রহমান সালেহী বলেন, ‘মসজিদটির স্থায়িত্ব রাখার জন্য এখন কিছু সংস্কার করা গেলো ভালো হয়। কারণ প্রাচীন এ মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম দেয়ালে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানে ইট খুলে গেছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিষেধ থাকায় কারও পক্ষেই এর ওপর হাত লাগানোর সুযোগ নেই। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কোনো রকম কাজই করছে না। মসজিদে অনেক মুসল্লি নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করেন। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
কে এই বাবা আদম:
বল্লাল সেনের নির্বংশ হওয়ার বিষয়ে পেশ ইমাম সালেহী বলেন, ‘ওই সময়ে কবুতরকেই বার্তাবাহক হিসাবে ব্যবহার করা হতো। রাজবাড়িতে বল্লাল সেনের নির্দেশনা ছিল, ধুতিতে রাখা কবুতর উড়ে আসলেই বোঝা যাবে বাবা আদমের সঙ্গে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছেন। আর সবাই যেন আত্মাহুতি দেন। কিন্তু বল্লাল সেন যুদ্ধে পরাজিত না হলেও রক্ত ধোয়ার জন্য পাশের জলাশয়ে গেলে কবুতর উড়ে বাড়ি চলে যায়। এ দেখে বল্লাল সেনও দৌড় শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্বভাবিকভাবেই কবুতর আগে রাজবাড়ি পৌঁছে যায়। বল্লাল সেন বাড়ি ফিরে দেখেন রাজ পরিবারের সবাই আগুনের কুণ্ডলিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে, এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে তিনিও একইভাবে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেন।’
স্থানীয়রা কহেন: