ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৩ : সোমবার রাতেও যেসব দোকানে কোটি টাকার মালামাল তোলা হয়েছিলো, আজ সেসব ব্যবসায়ী নিঃস্ব। বঙ্গবাজারের আগুনে চারটি মার্কেটসহ আশপাশের আরো তিনটি মার্কেটের কমপক্ষে তিন হাজার ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। চোখে দেখতে পাচ্ছেন ধুসর ভবিষ্যৎ। তারা বলছেন, সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও ক্ষয়ক্ষতির অঙ্কটা হাজার কোটি টাকার ওপরে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে সোয়া ছয়টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত ঘটে, তখন সেটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা মার্কেটে। বস্ত্র সামগ্রীর মার্কেট হওয়াতে আগুন ছড়িয়েছে খুব দ্রুত। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে গোটা মার্কেটে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেখানের হাজার হাজার দোকান, সেই সঙ্গে ছাই হয় হাজারো মানুষের রুটি রুজির একমাত্র উপায়।
অথচ আগুনের কয়েক ঘণ্টা আগে তৈরি পোশাকের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার হিসাবে খ্যাত বঙ্গবাজার মুখরিত ছিলো লাখো মানুষের কর্মযজ্ঞে। তারা ভাবতেই পারেননি পরের দিনই তাদের সবার জীবনে নেমে আসবে অসীম অন্ধকার, বসতে হবে পথে।
Advertisement
বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ দশ কোটি মার্কেট এবং আদর্শ মার্কেট; এই চারটি মার্কেট মিলেই মূলত রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার এলাকার বঙ্গবাজার। এই মার্কেটগুলো ছিলো দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের তৈরি পোশাকের যোগানদাতা।
Advertisement
ছয় ঘণ্টার আগুনে সেই বঙ্গবাজার সবই এখন ছাই ভস্মের স্তূপ। একদিকে যখন চলছে দানবীয় আগুন নেভানোর বিশাল যজ্ঞ তখন অন্যদিকে নিজেদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর লড়াই। চোখের সামনে যাদের সর্বস্ব পুড়ছে তাদের অসহায় আর্তনাদে ভারি হয়েছিলো পুরো এলাকা।
সোমবার রাতেও যিনি মার্কেটে পাঁচটি দোকানের মালিক ছিলেন, সেই ব্যবসায়ীই এখন নিঃস্ব। আগুনের সময় অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়েই চোখের সামনে দেখেছেন তার কোটি টাকার সম্পদ ছাই হতে। এমন দৃশ্য দেখে দিশেহারা এই ব্যবসায়ী। হারিয়ে ফেলেছেন মুখের ভাষাও।
Advertisement
ঈদকে সামনে রেখে এসব মার্কেটের সব ব্যবসায়ীই নিজেদের সব সঞ্চয় খাটিয়ে দোকানে মাল তুলেছিলেন। আশা ছিলো ঈদের বিক্রিতে সব খরচ মিটিয়ে থাকবে কিছু আয়ও। যা দিয়ে পূরণ হতো পরিবারের সদস্যের অনেক শখ। কিন্তু আগুনে সব কিছু এখন বিভীষিকা।
মঙ্গলবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বঙ্গবাজারের উল্টো পাশের রাস্তার ফুটপাতে বসে ছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা উদাস হয়ে দেখছিলেন ছাই হয়ে যাওয়া মার্কেট। তারা জানান, ঈদের আগে এই আগুনের তাদের যে ক্ষতি হয়ে গেলো সেটা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।
আগুন যখন আরেক মার্কেট এনেক্স টাওয়ার ও মহানগর শপিং কমপ্লেক্সকেও গ্রাস করছিলো, তখন ব্যবসায়ীরা সম্বল বাঁচানোর নতুন লড়াই। সড়কের পাশে বা খোলা জায়গায় যে যে ভাবে পেরেছে মালামাল স্তূপ করে রেখেছে। কিন্তু এই দুর্যোগে সেখানেও সুযোগ সন্ধানী দুর্বৃত্তের হানা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগুনে কয়েকশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছেন বহু মানুষ। পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে তাদের মাথায় হাত। ঈদ করা দূরের কথা, কি করে সংসার ও জীবন চালাবেন, সেই চিন্তায় মাথা ঘুরছে অনেক ব্যবসায়ীর।
আরও পড়ুন: ছবিতে বঙ্গবাজারের আগুন
অনেকেই জানিয়েছেন, আগুন তাদের সব আশা কেড়ে নিয়েছে। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকান থেকে এক টুকরো কাপড়ও বের করতে পারেননি তারা। আবার অনেকে কিছু মালামাল বের করতে পারলেও সেগুলো পানি লেগে নষ্ট হয়ে গেছে।
Advertisement
বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেরও ১৯৯৫ সালে ভয়াবহ এক আগুনে ছাই হয়েছিলো বঙ্গবাজার। সেই সময় এই মার্কেটটি পরিচিত ছিলো গার্মেন্টস পণ্যের মার্কেট হিসাবে। একমাত্র এই বাজারেই সে সময় সুলভ মূল্য বিক্রি হতো রপ্তানি মানের তৈরি পোশাক।