ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৩ : দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রথম আলোর দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এর মধ্যে আছেন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিশু অধিকারকর্মী, অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাবেক আমলা ও শিশু অধিকার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।প্রথম আলোর দায়িত্বজ্ঞানহীন এ প্রতিবেদনে তারা গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা সবাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করি এবং গণমাধ্যমের অধিকারকে সমুন্নত রাখি, যতক্ষণ গণমাধ্যমের নৈতিকতাকে সম্মান করা হয় এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা ক্ষুণ্ণ না হয়। কিন্তু যখন মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ১০ বছরের শিশুকে প্রতিবেদকের বর্ণনার সঙ্গে মানানসই মুখস্থ বিবৃতি দেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়, তখন তা হয় সত্যের সঙ্গে প্রতারণা। এমন ইচ্ছাকৃত ভুল মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’
Advertisement
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশন শিশুদের ধমকানো, পাচার, যৌন হয়রানি, গার্হস্থ্য শোষণ, মানসিক নির্যাতনের মতো অবমাননাকর আচরণ, অপরাধমূলক অসদাচরণ এবং শিশুদের শোষণ থেকে বাঁচাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুটিকে ঘুষ দিয়ে তাকে মিথ্যা বলার জন্য প্রলুব্ধ করায় অবশ্যই তার মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্কুলগামী শিশুটি এ কারণে যেমন স্কুলে লাঞ্ছনার শিকার হবে, তেমনি সমাজও তাকে ঘুষ খাওয়ার জন্য অপমান করবে। এ সময় সেই শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর যে প্রয়োজন তার দায় সেই সাংবাদিক নেবেন না; কিন্তু সরকারকে নিতে হবে।’
Advertisement
বিশিষ্টজনরা বলেন, ‘গণমাধ্যমের মৌলিক একটি নৈতিকতা হলো কোনো শিশুর ছবি প্রকাশ না করা (দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হলে শিশুটির ছবিটি ঝাপসা করে দিত)। একটি শিশুকে অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে শোষণ নিশ্চয়ই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আওতায় পড়ে না। সুতরাং, যারা এ ধরনের সাংবাদিকতাকে সমর্থন করতে চান, তাদের সে স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তা করার আগে তাদের অবশ্যই সত্য এবং বাস্তবতাটা কী, তা জানার জন্য আরও গভীরে খতিয়ে দেখা উচিত।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তবে আমরা কি অনুমান করব যে, তিনি সংবাদমাধ্যমের লোক বলে এমন ফৌজদারি অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন? তিনি কি দেশের আইনের ঊর্ধ্বে? তো এই অবস্থায় দেশের কোনো নাগরিক (সরকার নয়) যদি সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তবে কীভাবে তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থি হয়?’
Advertisement
পশ্চিমা গণমাধ্যম অধিকার সংস্থা দ্য মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন শিশু অধিকার খর্ব হওয়া সহ্য করে না; অথচ তারা নিজ দেশের বাইরে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে চোখ বন্ধ করে থাকে।’ বিবৃতিতে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনকে উদ্দেশ করে আরও বলা হয়, ‘আপনারা কি নিজ দেশের শিশুর ক্ষেত্রেও এমন লঙ্ঘন সহ্য করবেন? যে শিশুটিকে দিয়ে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে মুখস্থ স্ক্রিপ্ট আওড়ানো হয়েছে, তার সামনে তো মিথ্যার জগত উন্মোচন করা হয়েছে, সহজে অর্থ লাভের প্রলোভন দেখানো হয়েছে। ভবিষ্যতে সে যে কোনো অপরাধের দিকে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?’
বিবৃতিতে ইউনিসেফের অনলাইন শিশু সুরক্ষা নির্দেশিকা-২০১৫-এর ধারা-৩-এর উল্লেখ করে বলা হয়, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুটির পিতা-মাতার অনুমতি না নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে সে নির্দেশিকা ভঙ্গ করেছেন।
৫৩ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল এবং গণমাধ্যমগুলো ধারাবাহিকভাবেই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিবেদন করছে। এটি করতে গিয়ে তারা কখনো বৈশ্বিক মন্দার কথা বলছে, আবার কখনো বলছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে যে, সরকার এসব গণমাধ্যমের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? না, এমনটা হয়নি। আর এখানে সংবাদ প্রকাশ কেন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে শিশুকে অপব্যবহার এবং তাকে ঘুষ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, এ মামলা মূলত প্রতারণা, শিশুর অপব্যবহার এবং মিথ্যা সংবাদ প্রচারের।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রথম আলোর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করায় যারা মায়া কান্না কাঁদছেন তারাও জানেন যে, এটি সরকারের তরফ থেকে করা হয়নি।
বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার রক্ষা করতে গিয়ে যেন শিশু অধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয় এবং জাতিসংঘ ও পশ্চিমা বিশ্বকেও এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানানো হয়।
স্বাক্ষরদাতারা হলেন, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, ঢাবির সাবেক উপাচার্য আ স ম আরেফিন সিদ্দিকী, ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, গ্যালারী চিত্রক মনিরুজ্জামান মনির, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এবং সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর প্রতীক রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক বাহারুদ্দিন, বীর প্রতীক মিজানুর রহমান খান, বীর প্রতীক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী, বীর প্রতীক জয়নাল আবেদীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল হক মীনু, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল এনাম খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুদ্দিন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবী মাহফুজা খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা লুতফর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজি আব্দুল মোকিম সন্টু বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন কুড়িগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. জাকির হোসেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ আলম শান্তনু, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন। এ ছাড়াও স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসান, অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক ড. শফিকুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. জহিরুল হক সাচ্চু, অধ্যাপক ড. সুরাইয়া বেগম, অধ্যাপক ড. একেএম মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক ড. ফারুক আহমেদ, অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক ড. পূরবী রানী দেবনাথ, অধ্যাপক ড. শিউলি চৌধুরী এবং শহীদ-সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী।
Advertisement
এছাড়া অন্যদের মধ্যে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অ্যাকশন ফর সোশাল ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এমএ করিম, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন মো. মাহাবুবুল হক, অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশনের সভাপতি নার্গিস সুলতানা, ফ্যামিলি অ্যান্ড কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট সাপোর্টের নির্বাহী পরিচালক সাইরা বানু, কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওরের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সারনিয়াত, কন্যা শিশু অধিকার ফোরামের জলি, স্পর্শ শিশু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফেরদৌস আকিক এবং সংস্কৃতিকর্মী সাজুখাদেম, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, তুষার খান, মীর সাব্বির, পুনম প্রীয়ম, জ্যোতিকা জ্যোতি, সংগীত শিল্পী শুভ্র দেব এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ।