আগাম জামিন চাইলেন প্রথম আলো সম্পাদক (ভিডিও)

SHARE

 

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত প্রতিনিধি,রোববার, ০২ এপ্রিল ২০২৩ : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন প্রথম আলোর প্রকাশক ও সম্পাদক মতিউর রহমান।

Advertisement

স্বাধীনতা দিবসের দিন ‘বিতর্কিত সংবাদ’ প্রকাশ করায় ওইদিন রাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে হুকুমের আসামি হিসেবে নাম রয়েছে মতিউর রহমানের।

মামলা দায়ের তিন দিন পর রোববার (২ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে মতিউর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন।

Advertisement

রমনা থানার ওই মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের ছাড়াও পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যান’সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

মামলায় প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ আনেন বাদী মশিউর মালেক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

Advertisement

মামলার এজাহারে আইনজীবী মশিউর মালেক অভিযোগ করেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রথম আলো ‘অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে জনমনে ‘অসন্তোষ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়ে ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম’ হয়েছে।

রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু আনছারকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান।

Advertisement

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’

ওই মন্তব্য দিয়ে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। মুহূর্তে প্রথম আলোর এই খবর ভাইরাল হয়ে যায়। প্রথম আলোর সমালোচনা করে ব্যাপক সমালোচনা করেন নেটিজেনরা।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে, ওই শিশুকে টাকা দিয়ে ছবি তুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সেই ছবি ছাপা হয়েছে।

তীব্র সমালোচনার মুখে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি সংশোধন করে, ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর এমন প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকা এবং ‘স্বাধীনতাকে হেয় করে’ বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে বুধবার রাতে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া। সেই মামলায় কেবল প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকেই আসামি করা হয়। এরপর রমনা থানায় মামলা করা।

তেজগাঁও থানার সেই মামলার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে আটক করা হয় শামসুজ্জামানকে। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ‘শিশু নির্যাতন’ ও ‘শিশুর অপব্যবহারের’ কারণে’, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য নয়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে শামসকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত

সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতা দিবসে ওই জাতীয় দৈনিকর শিশুর ছবির সঙ্গে দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিনমজুরের সে বক্তব্যে স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে।

শিক্ষক সমিতি জানায়, শিশুটিকে উৎকোচ দিয়ে ছবি তোলা, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্কের ছবি তোলা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থী।

বিবৃতিদাতারা বলেন, এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনগঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জাল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই বাসন্তীকাণ্ড যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাজানো হয়েছিল তা পরে প্রমাণিত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে সরকার বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টায় কাউকে বিভ্রান্ত না হবার আহবান জানানো হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।

প্রথম আলো প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা জানিয়েছেন দেশের সম্পাদকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এডিটরস গিল্ড। সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক ইনাম আহমেদ সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিতর্কিত ওই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, প্রতিবেদনটি মহান স্বাধীনতাকে হেয় করার সামিল। এটি সাংবাদিকতার নামে এজেন্ডা বাস্তবায়নের ধারাবাহিক চেষ্টার অংশ। সাজানো ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ সাংবাদিকতা নয়, অপসাংবাদিকতা। এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়- কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনের ব্যাপারে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে মামলা দায়েরের আগে আমরা প্রেস কাউন্সিলের মতামত নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

এদিকে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার শাহবাগে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

প্রথম আলোর সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফোলকার টুর্ক এক বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ অবিলম্বে স্থগিত করতে বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।