ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি,রোববার, ০২ এপ্রিল ২০২৩ : কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হল থেকে এক শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) হলের ৪২৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মাহাদী হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ৪২৮ নম্বর কক্ষে আসন বরাদ্দ পেয়ে উঠেছিলেন বলে দাবি করেন। পরে জিনিসপত্রসহ তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়।
Advertisement
এ ঘটনায় শনিবার (০১ এপ্রিল) হল প্রভোস্টের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে মাহাদী হাসান উল্লেখ করেন, তিনি কয়েক দিন ধরে ৪২৮ নম্বর কক্ষে থাকছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬–১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকের মাধ্যমে বাংলা বিভাগের একই বর্ষের তরিকুল ইসলাম ওরফে তরুণ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম ফয়সাল ও বাংলা বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের আতাউর রহমান ওরফে রাজু তাকে হলে ডাকেন। তিনি হলে গিয়ে দেখতে পান, তার বই–খাতা, তোশক, বালিশ কক্ষের বাইরে বারান্দায় পড়ে আছে। সেখানে আগে থেকেই তরিকুল, ফাহিম, আতাউরসহ আরও একজন উপস্থিত ছিলেন।
মাহাদী অভিযোগে আরও বলেন, তিনি সালাম দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলে ফাহিম বলেন, ‘তুই মাহাদী, কোন কক্ষে থাকিস?’ জবাবে ৪২৮ নম্বর কক্ষের কথা বললে জিনিসপত্র নিয়ে সেখানে অবস্থান করার কথা বলেন। তখন ফাহিম বলেন, ‘আগে কোথায় ছিলি?’ তখন তিনি ৩০৮ নম্বর কক্ষে এক ছাত্রের কাছে অতিথি হিসেবে থাকার কথা জানান এবং এ–ও বলেন, তিনি ৪২৮ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ পাওয়ায় সেখানে উঠেছেন।
এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আতাউর ধমক দিয়ে বলেন, ‘তুই কে? তোকে আগে কখনো হলে দেখিনি তো! কে তোরে হলে তুলেছে? ওই সব আবাসিকতার কাহিনি বাদ দে, আমরা যা বলব, হলে তা–ই হবে।’
তরিকুল বলে ওঠেন, ‘আমারে চিনিস তুই, আমি কে? ভালোই ভালোই ৪২৮ থেকে সবকিছু নিয়ে যাবি। কোথায় যাবি, ৩০৮–এ থাকবি নাকি কোথায় থাকবি, আমরা জানি না।’ একপর্যায়ে বারান্দায় ফেলে রাখা বই–খাতা, তোশক–বালিশসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দিকে ইঙ্গিত করে তারা বলেন, ‘এখানে তোর সবকিছু আছে, নিয়ে চলে যাস।’
Advertisement
মাহাদী তার আবাসিকতা সুনিশ্চিত, হয়রানি করার জন্য তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একটা প্রি–তদন্ত করেছি। তাতে অভিযোগের সবটুকু সত্য পাওয়া যায়নি। আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, গত ৫ মার্চ নতুন তালিকায় মাহাদী হাসান আসন বরাদ্দ পেয়েছেন। তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে তার বরাদ্দ করা নতুন আসনে উঠতে পারেননি। হল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরিকুল ইসলাম, ফাহিম ফয়সাল, আতাউর রহমান ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তারা সবাই লালন শাহ হল নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।
এদিকে মাহাদী হাসানও নিজেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী দাবি করে জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী। যারা তাকে বের করে দিয়েছেন, তারা সবাই সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের অনুসারী। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিনি বাইরে অবস্থান করছেন।
Advertisement
মাহাদী হাসান আরও বলেন, ‘আমার বৈধ সিটে যে বড় ভাই ছিলেন, তিনি চলে গেছেন। সিটটি ফাঁকা পড়ে আছে। তারপরও আমাকে আমার বৈধ সিটে উঠতে দেয়া হচ্ছে না।’
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘মাহাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুনেছি, সে আমাদের সংগঠনই করে। তবে তাকে চিনি না। সে তার বরাদ্দের সিটে উঠেইনি। উঠতে চেয়েছে। তবে সেখানে আরেকজন ছাত্র আছে। তার কয়েক দিন পরেই পরীক্ষা শেষ হবে। এরপরই সে চলে গেলে ওই সিটে মাহাদী উঠতে পারবে। কিন্তু সে হয়তো কোনো শিক্ষকের প্রশ্রয়ে এমন অভিযোগ দিয়েছে।’