ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ফরিদপুরের মধুখালী প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩ : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় বাবার বিরুদ্ধে সৎ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ছেলেসহ একটি স্কুলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এরপর নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয় সোশাল মিডিয়ায়। এদিকে নির্যাতনের শিকার বাবা এ ঘটনায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ এখন পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়নি। পুরো ঘটনাটি ছিল সাজানো ষড়যন্ত্র।
Advertisement
সোমবার (২৭ মার্চ) পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা ও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলেন, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি গ্রামের ফরমান মোল্যা (২১), একই গ্রামের সজীব মোল্যা (২২) এবং একই উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের জুবায়ের শেখ (২০) ও হাসিব ভুঁইয়া (২০)। গ্রেপ্তারের পর ওই দিন দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
সোমবার (২৭ মার্চ) প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানা ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
পুলিশ সুপার জানান, নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি কুতুবউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, আদালত তাকে জামিন দিয়ে দিয়েছেন। এ মামলায় ফয়সাল ও জহরুল নামে আরও দুই জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। তবে আদালত তাদের জামিন নাকচ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। একই সঙ্গে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।
Advertisement
পুলিশ সুপার বলেন, যে মেয়েটির কথা এখানে বলা হয়েছে সে নির্যাতনের শিকার ইয়ামিন মৃধার প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। মেয়েটি হওয়ার পরই তার মা মারা যায়। দুই মাস আগে মেয়েটিকে স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় তার সৎ ভাই রাজন। তবে মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায় ওই স্কুলেরই একজন নিঃসন্তান শিক্ষক। মেয়েটিকে তিনি দুই বার তার ফরিদপুরের বাড়িতেও নিয়ে যান। শেষবার তিনি কাউকে না জানিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে গত ১৭ মার্চ তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই তার বাবাকে স্কুলে ডেকে নেয়া হয়েছিল। এরপর তার ভাইকেও ডেকে নেয়া হয়। তারপর ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। একই সঙ্গে নির্যাতনের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
Advertisement
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পরেরদিন বাবা ও ছেলেকে ডেকে এনে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কথা বলে আমরা বুঝতে পারি যে, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। পরে মেয়েটিকে যখন মেডিক্যাল টেস্ট করার জন্য পাঠানোর পর সে আদালতে জবানবন্দিতে বলেছে, ‘আমাকে যৌন নির্যাতন করা হয় নাই। আমি মেডিকেল টেস্ট করাতে চাই না। ওই মহিলা (রুমা) আমাকে প্রলোভন দেখিয়েছে। টাকা দিয়ে বলেছে যে তোর ভাই আর বাবার বিরুদ্ধে এসব কথা বলবি। আর ওই মহিলাকে একথা বলার জন্য ঠিক করেছেন ওই স্কুল শিক্ষিকা।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহজাহান বলেন, মেয়েটি আমাদের কাছে এসব কথা বলে নাই বরং কোর্টে বলেছে। এজন্য তার আগেই রাজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এখন বুঝতে পারছি রাজন মৃধা নির্দোষ। আমরা এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিবো এবং রাজন সংশোধনাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে যাবে।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে ইয়ামিন মৃধা (৪০) ও তার ছেলে রাজন মৃধাকে (১৫) আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এরপর নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় উঠে। ওই ভিডিওতে মাঝকান্দির রুমার নেতৃত্বে পাশবিক নির্যাতনের ভয়াবহতা ফুটে উঠে। সোমবার পর্যন্ত রুমা গ্রেপ্তার হয়নি। তবে তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন করসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।