বাঞ্ছারামপুর থানা যেন হয়রানির ফাঁদ!

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩ : থানায় আটকে রেখে নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো, সালিশ বাণিজ্যসহ গুরুতর নানা অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ আছে, নিয়মিত সালিশ বাণিজ্য বসিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় কতিপয় নেতা টাকা ভাগবাটোয়ারা করেন। জমি সংক্রান্ত ও টাকা আদায়ের মতো ঘটনার সালিশে এমনটি বেশি ঘটে থাকে। এছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

Advertisement

স্থানীয়দের অভিযোগ, হত্যা, ডাকাতি, নাশকতা ও বিষ্ফোরক আইনের মামলায় অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও পুলিশকে ম্যানেজ করে এলাকায় দাপায়ে বেড়াচ্ছে। বড় বড় অনেক মাদক ব্যবসায়ীরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বাঞ্ছারামপুরবাসী জিম্মি।

Advertisement

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর সদরে বিএনপির মিছিলে সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. নয়ন মিয়াকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন এসপি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলম সহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামী করে নয়নের বাবা রহমত উল্লাহ ব্রহ্মণবাড়িয়া আদালতে মামলা করেছিলেন। কিন্তু সেটি আদালত খারিজ করে দেন।

Advertisement

এদিকে গত ১৪ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ থানায় আটকে রেখে উপজেলার চর শিবপুর গ্রামের আবদুল আহম্মদ রুবেল নামের এক প্রবাসীকে স্বর্ণের বার আত্নসাৎ এর অভিযোগে চরম নির্যাতন করা হয়। এই ঘটনায় গত ১৯ মার্চ রোববার রুবেলের মা আমেনা বেগম বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন।

এতে আসামি করা হয়েছে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে ও সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আল আমিন মানিক ছাড়াও বাঞ্ছারামপুর সদরের মধ্যপাড়ার রবি উল্লাহকে। আদালত কিছু নির্দেশনা দিয়ে এই মামলাটি খারিজ করে দেন। আদালতের নির্দেশনার আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার বরাবর মামলার বাদী আমেনা বেগম তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী আশ্রাফবাদ গ্রামের মৃত আহাম্মদ আলীর বিধবা স্ত্রী জরিনা বেগম (৫৫) বলেন, আমার পুত্রবধূ আয়েশা ও আমার পরিবারের আরও কয়েক জনকে একটা মিথ্যা মামলা দিয়া পুলিশ পাঠাইয়া বারবার হয়রানি করছে। আমরা পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়েছি।

Advertisement

 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আমেনা বেগম বলেন, আমার প্রবাসী ছেলেকে পুলিশ বাড়ি থেকে ধইরা নিয়ে দুদিন থানায় আটকাইয়া রাইখা সারা শরীরে মারতে মারতে (নির্যাতন) মরার অবস্থা। পরে পুলিশই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইয়া আদালতে পাঠাইছে। এই ঘটনায় আমি ওসি তদন্ত ও এএসআই এবং যে পুলিশকে টাকা দিয়া পিটাইছে হেরে (তাকে) সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোর্টে মামলা করছিলাম, এইটা নাকি খারিজ করে দিছে। এখন আমি হাইকোর্টে আপিল করমু। পুলিশের ভয়ে আমি এখন পলাতক আছি।  জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এসপি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করছি।
এছাড়া অভিযোগ উঠেছে বাঞ্ছারামপুর থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে সুবিধা নিচ্ছেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে বাঞ্ছারামপুর থানার কয়েকটি সড়কে ও বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খুবই রহস্যজনক।

এ বিষয়ে ফরদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত ডিসেম্বরে ফতেপুর টু রূপসদী সড়কের মাঝামাঝি আমি ডাকাত দলের কবলে পড়েছিলাম। আমার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন ও নগদ প্রায় ৫০হাজার টাকা নিয়ে গেলে ডাকাত দল। এ ঘটনায় পরে কেউ গ্রেফতার হতে শুনিনি।

অবশ্য বাঞ্ছারামপুর থানার এএসআই মো: হানিফ খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী মরিচাকান্দির রেজন মিয়াকে মাদকসহ ছেড়ে দেওয়া, কানাইনগরের ওয়ারেন্টের আসামী ছেড়ে দেওয়া, মেঘনা নদীতে পিকনিকের নৌকায় সাউন্ড বক্স বাজানোর জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সব অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, আমরা যেহেতু মাঠে কাজ করি সেহেতু যে কেউ অভিযোগ করতে পারে। তিনি থানায় সালিশের মাধ্যমে টাকা আদায়ের বিষয়টিও অস্বীকার করেন।  তবে ওসি বলেন, যদি ভুক্তভোগীরা বলে আমরা দুপক্ষ থানায় বসবো তখন থানার গোলঘরে এসে বসে। তখন উপয়ান্তর না দেখে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাবদ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, এটা আমার জানা নেই। অন্য যেসব অভিযোগ তুলেছে সেগুলোও সঠিক নয় বলে দাবি করেন এ ওসি।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ব্যাপারে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে। আমরা কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছি।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, থানার নিদিষ্ট কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্তে সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।