ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পাবনা প্রতিনিধি,রোববার, ২৬ মার্চ ২০২৩ : রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গাড়িচালক সম্রাট হোসেন (২৯) হত্যার পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার বন্ধু প্রধান সন্দেহভাজন আব্দুল মমিন (৩১)। এখন পর্যন্ত (শনিবার রাত ৮টা) তার কোনো সন্ধান পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে লাশ উদ্ধারের পর একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাথায় তা হলো, সম্রাটকে হত্যার কারণ ‘টাকা নাকি পরকীয়া’?
Advertisement
নিখোঁজের দুইদিন পর পাবনা-কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী পদ্মানদীর শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে রূপপুর প্রকল্পের নিকিমত কোম্পানির গাড়িচালক সম্রাট হোসেনের মরদেহ শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয় বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়িটি।
Advertisement
নিহত সম্রাট পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্য অরণকোলা আলহাজ্ব ক্যাম্প এলাকার আবু বক্কারের ছেলে। রূপপুর প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে সম্রাটের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় একই উপজেলার বাঁশেরবাদা গ্রামের আব্দুল মমিনের।
এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত সম্রাটের বন্ধু মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুন (২৭) কে আটক করেছে। তবে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন নিহত সম্রাটের বন্ধু মমিন।
Advertisement
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, শনিবার সকালে সম্রাটের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। দুপুরের পর ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যার পর দাফন সম্পন্ন হয়। নিহত সম্রাটের পরিবারের পক্ষ থেকে রাতে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঈশ্বরদী থানায় মামলাটি দায়ের হবে।
Advertisement
ওসি অরবিন্দ আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক সুমী খাতুন পুলিশকে একেকবার একেকরকম তথ্য দিচ্ছেন। তবে তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেগুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়ার পর বোঝা যাবে ঠিক কি কারণে সম্রাটকে হত্যা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সম্রাটের বন্ধু মমিনকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
তবে নিহত সম্রাটের বাবা আবু বক্কারের দাবি, সম্রাটের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে বন্ধু মমিন ও তার স্ত্রী সীমা মিলে সম্রাটকে হত্যা করেছে।
প্রাডো জিপ গাড়ির মালিক আনিসুর রহমান বলেন, আটক মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুন পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট আমার বাসায় আসে। আমাকে বলে তার মাথা ধরেছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী মমিন ওষুধ আনতে গেলে সম্রাট আমার শরীরে হাত দেয়। আমি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপনাঙ্গে আঘাত করলে সে মারা যায়। পরে আমার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে বিভিন্নস্থানে ঘুরাঘুরি করার পর আমার স্বামী আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহে গাড়ি রেখে সটকে পড়ে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ জানান, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পদ্মার পাড়ে পড়ে থাকা গাড়ি থেকে সম্রাট খান (২৬) নামের যে যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে হত্যা করা হয়েছিল পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বাঁশেরবাদা এলাকায়। বাঁশেরবাদা থেকে কুমারখালীর ঘটনাস্থলের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। বাড়িতে হত্যার পর লাশ গুম করার উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে গাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে পদ্মার পাড়ে ফেলে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রসাটমের নিকিমত কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন সম্রাট হোসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আটটার দিকে সম্রাট তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার খোঁজ না পেয়ে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়রি করেন।
Advertisement
শনিবার সকালে পাবনার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাডো জিপের ভেতর থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনরা গিয়ে মরদেহটি সম্রাটের বলে সনাক্ত করেন।