ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মেহেরপুর প্রতিনিধি,শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ : মেহেরপুরে করোনা টিকা দেয়া স্বেচ্ছাসেবীদের বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। নামে বেনামে সাক্ষর জালিয়াতি করে তোলা হয়েছে বিল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কাজ করেও অনেকেই পাননি একটি টাকাও। হাসপাতালের টিকাদান কর্মকর্তারা এ অর্থ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তাদের।
Advertisement
করোনাকালীন সময়ে জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষকে টিকা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। অথচ সরকার থেকে বরাদ্দ সেই টাকা আজও বুঝে পাননি তারা। এদিকে মেহেরপুর গাংনী ও মুজিবনগর উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনার টিকা দেয়া স্বেচ্ছাসেবীদের দু’টি বিলের কপি আসে চ্যানেল 24 এর হাতে। অভিযোগ রয়েছে, এ বিলের সকল স্বাক্ষর জালিয়াতি করে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স আমেনা খাতুন জানান, আমি সহ আরও বেশ কয়েকজন নার্স করোনার টিকাদানে নিয়মিত কাজ করেছি। তালিকায় আমাদের নামও রয়েছে। অথচ সাক্ষর করার কপির একটি সাক্ষরও আমাদের নয়। বিলের জন্য যখন আমরা হাসপাতালের টিকাদান কর্মকর্তা আব্দুর রশীদের কাছে যায় এ বিল নাকি আমাদের তা বলে তাড়িয়ে দেন।
বিষয়টি জানানো হয়েছিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জনকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান মেলেনি। তালিকায় থাকা অন্য চার নার্স রোকেয়া খানম, শাকিলা ও রাবেয়া খাতুনেরও একই দাবি।
Advertisement
তবে রোকেয়া খানম বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গেছি। এর কোন সমাধান হয়নি। আর টিকাদান কর্মকর্তা আমাদের বলেন, এই নাম নাকি আমাদের না, অন্য স্বেচ্ছাসেবীদের। এই টাকা তারা পাবেন। অথচ ঐ চার জনের একজনেরও কোন ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর তিনি দিতে পারেননি।
এদিকে তালিকায় থাকা ঐ হাসপাতালের স্টাফ সাজেদুর দাবি করেন, তিনি সাক্ষর দিয়ে পুরো টাকা পেয়েছেন। অথচ কতো টাকা পেয়েছেন তা বলতে পারেননি। এমনকি একটি কাগজে সাক্ষর করতে বললে তিনি দুটি সাক্ষর করেন। অথচ বিলে থাকা সাক্ষরের সঙ্গে তার কোন মিল নেয়।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, কপিতে তারা সাক্ষর করেননি। তাদের নামে কতো টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার কিছুই জানেন না তারা।
অভিযোগ নিয়ে কথা হয় হাসপাতালে টিকাদান কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের সঙ্গে। নার্সদের নামের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নাম অন্য জনের। আমাদের কাছে এখনও দুই লাখ টাকা রয়েছে। সেগুলো স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে বিতরণ করা হবে। তবে এ টাকা কাদের দেয়া হবে তার কিছুই তিনি জানাতে পারেননি।
এদিকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকায় দেখা যায় টিকাদান কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বিল তুলেছেন তার ছেলে রকিবুল হাসান, ছেলের বউ মেঘলা খাতুন ও ভুয়া নাম মেহেদি হাসানের নামে।
Advertisement
স্বেচ্ছাসেবী কবিতা খাতুন বলেন, আমি ৫৮ হাজার ৮শ’ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছি ৪২ হাজার টাকা। বাকি টাকা চাইতে গেলে আব্দুল মজিদ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। আর তালিকায় থাকা রকিবুল ইসলাম, মেঘলা খাতুন ও মেহেদী হাসানকে আমরা কখনই দেখেনি। এমনকি আমরা তাদের চিনিও না। স্বেচ্ছাসেবী শান্তনা খাতুন বলেন, করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। অথচ আমরা পাওনা টাকার পুরোটা কখনই পায়নি। আমাকে দেয়া হয়েছে মাত্র ২২ হাজার টাকা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়েও কোন সমাধান মেলেনি।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ প্রথমে বিলের তালিকা দিতে রাজি হননি। এমনকি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তালিকা দেখানোর পর তার কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
Advertisement
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুপ্রভা রানী বলেন, টিকাদান কর্মকর্তার কাছে স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকা চাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত তিনি দেননি। বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও কোন তালিকা তারা দিচ্ছেন না। সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য তাদের বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি এখন আমি জানলাম। আমি নিজেই এর তদন্ত করবো। দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।