মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুষ্টিয়ার কাজী আরেফ আহমেদসহ পাঁচ জাসদ নেতার তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর হবে আজ রাতে। রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ৩ জনের আলাদাভাবে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব, কুর্শা গ্রামের উম্মত মন্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও সিরাজ ওরফে আবুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ওরফে আকবর ওরফে ঝন্টু। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়েছে।
কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফাঁসির রায় কার্যকরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েদি ও বাইরের কয়েদি জল্লাদ হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে। তিন দফায় ৩ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য ফাঁসির মঞ্চও প্রস্তুত রয়েছে। রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যেই ৩ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিন আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
যশোরের সিভিল সার্জন শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। এ সংক্রান্ত লাল চিঠি পেয়েছি। ফাঁসি কার্যকরে সিভিল সার্জন হিসেবে যে ভূমিকা পালন করতে হয় সেটি পালনে মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। বুধবার আসামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা সুস্থ আছে। আজ আবারও তিন আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ফাঁসির রায় কার্যকর সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। ফাঁসিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী এক জনসভায় চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মন্ডল। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সে সময় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত এ হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করলে ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট আদালত ফাঁসির এক আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১০ জনের সাজা মওকুফ করে রায় দেন।
পরে সরকার পক্ষ (বাদী) সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে আদালত ২০১১ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে রায় দেন। পরে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা সুপ্রিমকোর্টে রিভিউ করলে তাও ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু এতো দিনেও রায় কার্যকর হয়নি।
কারাগার সূত্র মতে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৯ জন ফাঁসির আসামির মধ্যে মান্নান মোল্লা, বাখের, রওশন, জাহানসহ ৫ জন পলাতক রয়েছে।