ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ : বিশ্বে প্রথম যিনি উটের ক্লোনিং করে সফল হয়েছিলেন তিনি হলেন নিসার আহমেদ ওয়ানি। ২০০৯ সালের কথা। তখনই এই ক্লোনিং বিষয়টি একটি বড় অর্জন হিসেবে সমাদৃত হয়। ক্লোনিং একটি প্রক্রিয়া মূলত। যে কোন প্রাণীরই ক্লোনিং করা যায়। তবে দুবাইতে উটের ক্লোনিং বড় একটি ব্যবসা। এই পদ্ধতিতে একটি গৃহপালিত প্রজাতিকে ব্যবহার করা হয় যেটির সঙ্গে উটের নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ততা থাকতে হবে।
Advertisement
আর সেই গৃহপালিত প্রজাতিকে ব্যবহার করা হবে ডিম্বাণু দাতা ও সারোগেট মা হিসেবে। সারোগেট মা ক্লোন করা ভ্রুণ থেকে জন্ম দেবে বাচ্চার। একটি স্ত্রী উট থেকে ভ্রুণ সংগ্রহ করে প্রজনন হার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উটের মধ্যে সেই ভ্রুণ স্থাপন করা হয়।
Advertisement
যেটির সফল একটি পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৭ সালে। রিপ্রোডাক্টিভ বায়োটেকনোলাজি সেন্টারে। তখন প্রথম ব্যাকট্রিয়ান উটের বাচ্চার জন্ম দেওয়া হয়। বিশ্বের প্রথম ক্লোন উটের নাম হলো ‘ইনজাজ’।
ওয়ানি যিনি প্রথম উট ক্লোনিং করেছিলেন তিনি বর্তমানে দুবাইয়ের রিপ্রোডাক্টিভ বায়োটেকনোলজি সেন্টারের বৈজ্ঞানিক পরিচালক। ওয়ানি এখানে একাই সম্পৃক্ত নন। তার সঙ্গে তার গবেষণা দল আছে।
Advertisement
তারা নতুন ক্লোনিং কৌশল বিকাশ এবং সেল ব্যাঙ্কগুলি বজায় রেখে মহিষ এবং ভেড়া সহ প্রাণীর অনুলিপি বা ক্লোনিং করেন। তবে তাদের গবেষণাগারের মূল টার্গেট থাকে উটের ক্লোনিং।
প্রতি বছর এখানে কয়েক ডজন ক্লোনড ড্রোমেডারি উটের বাছুর জন্ম দেওয়া হয়। দুবাইতে উটের ক্লোনিংই বড় একটি ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে দুটি বিষয় মুখ্য একটি হচ্ছে উটকে আরব আমিরাতে সাংস্কৃতিক প্রতীক একই সঙ্গে সৌন্দর্যের প্রতিলিপি বলে বিবেচনা করা হয়। উটের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা উপসাগরীয় রাজ্যগুলিতে বেশি জনপ্রিয় হওয়ায় বেশ কিছু ইভেন্টে এতে পুরস্কারের অর্থ থাকে মিলিয়ন ডলার।
Advertisement
তবে এখানে একটি বড় বিষয় হচ্ছে সিলিকন এবং ফিলার দিয়ে উটকে ইনজেকশন দিয়ে এদের চেহারা উন্নত করতে রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করে শরীরের অঙ্গগুলি ফুলিয়ে দেওয়ার মতো নিষিদ্ধ প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য মালিকদের অতীতে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে প্রতিযোগিতায় ক্লোন করা উট পুরোপুরি বৈধ। যার কারণে প্রতিযোগিতায় উদ্বুদ্ধ হতে এই ক্লোনিং উটের প্রতি ঝুঁকছেন উট মালিকরা। এবার আসা যাক এর খরচ সম্পর্কে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর উটের ক্লোনিং বা অনুলিপি করতে খরচ পরবে দুই লাখ দিরহাম বা ৫০ হাজার ডলারের বেশি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই প্রতিযোগিতা এত বেশি জনপ্রিয় যে প্রতিযোগিতায় জকি হিসেবে রোবটও ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং জয়ী উটের মালিক পাচ্ছেন হাজার হাজার ডলার। উট দুবাইতে ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপনের একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিযোগিতা ছাড়াও আরব উপদ্বীপের মরুভূমিতে পরিবহন এবং দুধ ও মাংস উৎপাদনের মাধ্যম হলো উট।
তাছাড়া তেল ও গ্যাসের আগে আরব উপদ্বীপে জীবন টিকিয়ে রাখতে অপরিহার্য অংশ ছিল উট। তাই দুবাইয়ে আমিরাতি ট্রাইব ও পরিবারের কাছে উটের মর্যাদা অধিক।
দুবাইয়ের ক্যামেল ব্রিডিং সেন্টার ও ক্যামেল রিপ্রোডাকশন সেন্টারে ক্লোনিংয়ের বদলে ভ্রুণ স্থানান্তারের মাধ্যমে উচ্চমানের উটের জন্ম দেওয়া হয়।
বর্তমানে ওয়ানি এবং তার গবেষণা দল ক্লোনিংয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংকটাপন্ন প্রজাতিকে সংরক্ষণ করতে চান এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে বেশ আশাবাদী।