জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করে রেলের টিকেট (ভিডিও)

SHARE

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করে ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছেন যাত্রীরা। এই নিয়ম কার্যকরের প্রথমদিনে স্বল্প শিক্ষিত ও বয়স্ক যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তবে প্রযুক্তিতে অভ্যস্তরা সহজেই নিবন্ধন করতে পেরেছেন।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলছেন, নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতে খানিকটা সময় লাগবে। একটি নতুন জিনিস বাস্তবায়ন করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে, কিন্তু চেষ্টা থেমে গেলে চলবে না। তারা চেষ্টা করছেন সেবার মান উন্নত করতে, টিকেট কালোবাজারি বন্ধ করতে।

Advertisement

তিনি জানান, ট্রেনে ভ্রমণ করা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে স্টেশনে ব্যবস্থা থাকবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। এটিকে ঘিরে দালালচক্র গড়ে ওঠার সুযোগ নেই। সুযোগ না থাকায় কালোবাজারি বন্ধ হয়ে যাবে।

বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, টিকেটের কাউন্টার ফেলে কমলাপুর স্টেশনের এক কোণে বহু যাত্রীর জটলা। সবাই এসএমএসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের চেষ্টা করছেন। তাদের সহায়তা করছেন রেলের একজন বুকিং সহকারী।

শুরুতেই বিপত্তি। স্টেশনে আসা যাত্রীদের অনেকেই এই নতুন নিয়মের খবর জানতেন না। তাই বুঝতেই পারছিলেন না কেমন করে নিবন্ধন করতে হবে। টিকেট কাটতে না পেরে অনেকেরই যাত্রা বাতিল হয়। হতাশ হয়ে বাড়ির পথ ধরতে বাধ্য হন তারা।

Advertisement

অন্যদিকে প্রযুক্তিতে অভ্যস্তরা সহজেই নিবন্ধন করতে পেরেছেন। কিন্তু বয়স্ক ও অশিক্ষিত যাত্রীদের কাছে এটি ছিল বেশ জটিল একটি কাজ। বারবার এসএমএস পাঠিয়েও অনেকে ফিরতি এসএমএস পাচ্ছিলেন না। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।

এর মধ্য দিয়ে ট্রেনে কার্যকর হলো টিকেট যার ভ্রমণ তার নীতি। অর্থাৎ একজনের টিকেটে আরেকজন ভ্রমণ করতে পারবেন না। সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে এসে রেলমন্ত্রী সুজন জানান, কালোবাজারি ঠেকাতেই এই নতুন নিয়ম। মানুষের অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে।

তিনি বলেন, এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন ছাড়া ট্রেনের টিকেট কেনা যাবে না। অন্যের এনআইডি কার্ড দিয়ে কেনা টিকেটে কেউ ভ্রমণ করলে বিনাটিকেটের যাত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, যাত্রীরা যাতে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে এবং কোনো প্রকার কালোবাজারি ছাড়াই নিজের টিকেট নিজে কাটতে পারে, সেটির জন্যই আমরা টিকেটে জাতীয় পরিচয়পত্র সংযোজন করেছি। এটিই শেষ নয়, প্রয়োজনে আমরা যাত্রীসহ সবার মতামত নিয়ে আরও সংস্কার করব।

মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে অন্যের টিকেটে কেউ ভ্রমণ করলে বিনাটিকেটের যাত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া টিটিইদের কাছে পস মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা বিনাটিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করবে এবং এ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

তিনি বলেন, আজ আমরা একসঙ্গে ১০০ পস মেশিন হস্তান্তর করছি। যারা এগুলো চালাবেন তাদেরকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও একটি সুবিধা থেকে কার্যকর হয়েছে- টিকেট বাতিলের জন্য আর কাউন্টারে যেতে হবে না। অনলাইনেই টিকেট বাতিল করা যাবে।

Advertisement

টিকিট সংগ্রহ ও ফেরত দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে যে কোনো জায়গা থেকে যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইনে বাড়িতে বসে টিকিটের টাকা ফেরতও নিতে পারবেন, কাউন্টারে আসতে হবে না। গত ১৫ দিনে চার লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছেন।

তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু কোনোক্রমে নিবন্ধন ছাড়া টিকিট পাওয়া যাবে না। আগে টিকিট হলেই একজন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারতেন, এখন আপনার টিকিটে আপনাকে ভ্রমণ করতে হবে।

রেলমন্ত্রী আরও বলেন, টিকিট থাকলেই ভ্রমণ করা যাবে না। এর আগে সুযোগ ছিল পাঁচটা বা দশটা টিকিট কেটে কালোবাজারি করে বিক্রি করা যেত। অন্যের টিকিট নিয়েই অনেকে ভ্রমণ করতে পারতেন। এখন সেটা পারবেন না। আর বিনা টিকিটে কেউ ভ্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এনআইডির তথ্য পাচারের কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছি। যতটুকু দরকার ততটুকু তথ্যই আমরা নেব এবং মূল সার্ভারের সঙ্গে তথ্যগুলো যুক্ত থাকবে।