আমিরের নির্দেশে পাহাড় ছেড়ে সমতলে আশ্রয় নিচ্ছে জঙ্গিরা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রামের পটিয়া প্রতিনিধি,বুধবার, ০১ মার্চ ২০২৩ : চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা সবাই তারা সবাই নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে সমতলে এসে আশ্রয় নিচ্ছে এই জঙ্গিরা। পাহাড়ে জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলো পাহাড়িদের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ।

Advertisement

সাম্প্রতিক সময়ে বেশকজন তরুণ-যুবকের নিখোঁজ হওয়ায় তাদের সন্ধানে নেমে আনসার আল ইসলাম ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন জঙ্গি দলের সন্ধান পায় র‌্যাব। নতুন এই জঙ্গি সংগঠন অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছিলো দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামকে। যেখানে তাদের সহযোগিতা করছিলো পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পাহাড়কে আর নিরাপদ মনে না করায় হাইকমান্ডের নির্দেশে আত্মগোপনের জন্য সমতলে আশ্রয় নিচ্ছে জঙ্গিরা। এমনই চার জঙ্গিকে পটিয়ার বাইপাস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। মঙ্গলবার গভীর রাতে পটিয়া বাইপাস এলাকায় এক অভিযান পরিচালনা তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পটিয়ায় গ্রেপ্তার চারজন হলেন- হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২) এবং আল আমিন ওরফে পার্থ কুমার দাশ (২১)। পার্থ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ২০১৮ সালে আল আমিন নাম নেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। এদের মধ্যে নিহাল ২০২২ সালের অগাস্টে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আট তরুণের একজন, যিনি কথিত হিজরতের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন। নিহালকে নিয়ে ওই আটজনের সবাই এখন গ্রেপ্তার হলেন।

Advertisement

পরের দিন বুধবার অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানায় র‌্যাব। চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার চারজন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ‘তাত্ত্বিক জ্ঞান’ নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের কাছ থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে যান।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে সেনাবাহিনীর টহল ও র‌্যাবের টানা অভিযানে জঙ্গি সংগঠনটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তাই সংগঠনের আমিরের নির্দেশে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সমতলে চলে আসছিলো।

চারদিন পূর্বে তারা সমতলে আসার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গহীন থেকে হেঁটে বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় আসে। পরে সিএনজিযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসার পথে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে চার জনকে আটক হয় এবং আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

Advertisement

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে গিয়েছিল এমন একটি দল আত্মগোপন করতে কিংবা তাদের পরবর্তী মিশন শেষ করতে সমতলের দিকে আসছে এমন তথ্য পায় র‌্যাব। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়া বাইপাসের চেকপোস্টে একটি অটোরিকশা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা চট্টগ্রামের দিকে আসছিলেন।

গ্রেপ্তারদের বরাতে র‌্যাবের এ সদস্য বলেন, তাদের পেছনে ৪-৫ জনের আরেকটি দল ছিল। যারা চেকপোস্ট দেখে পালিয়ে যান। এ সময় এদের কাছে বিভিন্ন তথ্যসহ কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, এটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারিও এধরনের একটি ভিডিও কনটেন্ট পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার চারজনকে রাঙামাটির বিলাইছড়ি থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, গত অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা। এদের মধ্যে অনেকেই তথাকথিত হিজরতের নামে স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন।

এদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ’র ১৭ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করার কথাও সংবাদ সম্মেলনে সম্মেলনে জানানো হয়, যারা শারক্বীয়াকে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিল বলে জানায় র‌্যাব। এর আগে এ জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর ৫৫ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল র‌্যাব।

কমান্ডার আল মঈন জানান, হিজরতের নামে জঙ্গিবাদে জড়ানো যে ৫৫ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১২ জন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ৩১ জন নভেম্বরে এবং ১২ জন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে পার্বত্য অঞ্চলে যান। এদের মধ্যে ২৭ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে; দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, আট তরুণের যে দলটি কুমিল্লা থেকে হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছিলেন তাদের নেতৃত্বে ছিলেন নিহাল। ২০২০ সালে এক বন্ধুর মাধ্যমে মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায় তারা। ২০২২ সালের ২৩ অগাস্ট হিজরতের জন্য ঘর ছাড়েন তারা।

তিনি বলেন, পরে সেপ্টেম্বরে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে নিহাল পার্বত্য অঞ্চলের কেএনএফ’র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যান এবং বিভিন্ন অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে হোসাইন ও দুই আল আমিন ওই কেন্দ্রে গিয়েছিলেন।

কুমিল্লা থেকে ঘর ছেড়ে আসা তরুণদের মধ্যে কয়েকজন ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও নিহাল তাদের বিভিন্ন বিষয়ে অপব্যাখ্যা দিয়ে আটকে রেখেছিলেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণে যেতে বাধ্য করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে সামরিক শাখার প্রধান বা অন্যান্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান মাহমুদ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবসহ অনেককেই আইনের আওতায় আনা যায়নি।