ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন ও অপরাধ প্রতিনিধি, সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : অপরাধবিষয়ক সিরিজ দেখে মানুষ সচেতন হচ্ছে নাকি অপরাধ শিখছে? সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা ভাবাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে অল্প বয়স্করা ক্রাইম শো দেখে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে, ঘটাচ্ছে খুনের মতো ভয়াবহ অপরাধ, শিখছে আলামত নষ্টের কৌশল। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি অনুষ্ঠান নির্মাতাদের নতুন করে ভাবতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য গেল ২ ফেব্রুয়ারি খুন হয় খুলনার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মণ্ডল। পুলিশি তদন্তে দেখা যায়, খুনি তারই ক্লাসের পাঁচ বন্ধু। স্মার্টফোনে ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে তারা অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে। নিজ বন্ধুকে গলায় রশি পেঁচিয়ে খুন ও আলাতম নষ্টের কৌশলও শিখে ওই সিরিয়াল দেখে। অপরাধে জড়িয়ে ওই পাঁচ স্কুল পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। আর আদরের সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় নীরবের মা। সন্তান হারানোর শোকে বিলাপ করে তিনি বলেন, আমি তাদের শাস্তি চাই… কঠোর শাস্তি। আমি ওদের ফাঁসি চাই।
এর আগে ২৬ নভেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুরে ফুল ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব খুন হন। তদন্তে দেখা যায়, তার সহকারী কিশোর জালামিনই হত্যাকারী। ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখে খুনের পরিকল্পনা করে সে। সব বয়সীদেরই অপরাধমূলক সিরিজগুলোর প্রতি বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। অপরাধের কৌশল থেকে আসামি শনাক্ত করার খুঁটিনাটি সবই তুলে ধরা হয় এসব অনুষ্ঠানে।
একজন অভিভাবক বলেন, অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে। এগুলো দেকে শিশুদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তেছে। এ জন্য এই অনুষ্ঠানগুলো দেখার সময় আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
দর্শকপ্রিয়তার কারণে অপরাধবিষয়ক সিরিজ নির্মাণে ঝুঁকছেন নির্মাতারাও।
Advertisement
সাধারণ দর্শকরা বলছেন, অপরাধের নানান বিষয়গুলো ওই অনুষ্ঠানগুলোতে তুলে ধরছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেগুলো দেখে শিখে যাচ্ছে। অপরাধ ভিত্তিক গল্পগুলো এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়, সেগুলো মানুষের বিনোদনের একটি উৎস হয়ে গেছে। এগুলোর যে নেতিবাচক প্রভাব আছে, সেগুলো মানুষ বুঝতে চায় না। অনুষ্ঠান নির্মাতারা যদি এক্ষেত্রে সতর্ক ভূমিকা পালন করে, তাহলে ভালো হবে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যবেক্ষণ বলছে, এসব কনটেন্টের ইতিবাচক দিকের চেয়ে নেতিবাচক দিকটাই বেশি। সবচেয়ে প্রভাবিত হচ্ছে শিশুরা।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, তারা টিভিতে প্রচারিত বিভিন্ন কনটেন্ট, বিশেষ করে ভায়োলেন্স (সহিংসতা) সম্পর্কিত কোনো অনুষ্ঠান দেখলে উদ্বুদ্ধ হয়। তারা সেই ধরনের কার্যক্রম করার চেষ্টা করে। তাই কোনো কনটেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের মাথায় রাখতে হবে—শিশু-কিশোররা সেটি দিয়ে নেতিবাচকভাবে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে কি-না।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য যেনতেন অনুষ্ঠান না বানিয়ে, এর কুপ্রভাব নিয়ে ভাবা উচিত।
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা এগুলো বন্ধ করতে পারব না। তবে, যারা এগুলো করছেন, তারা যেন করতে না পারেন—সেই জায়গাগুলো তৈরি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে ধরবে এবং বিষয়গুলো একটি নিয়ন্ত্রণ করে একটি সহনশীল জায়গায় নিয়ে আসবে। এ ছাড়া সেন্সর বোর্ড এসব কনটেন্ট দেখে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
অপরাধমূলক সিরিজ শিশু সন্তানের মনোজগতে কী প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের নজর বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।