ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : ঢাকায় প্রতারণার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা অভিনব উপায়ে লাখ লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য হাতিয়ে পালিয়ে যান। তারা কখনও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, কখনও উর্ধ্বতন কর্মকতা, আবার কখনও ঠিকাদার সেজে কোনও দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য কেনেন। এরপর কৌশলে সেসব পণ্য নিয়ে পালিয়ে যান।
দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরে ঘুরে তারা এমন প্রতারণা করেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি এভাবেই ২৫ টি ফ্যান নিয়ে পালিয়ে যান তারা। পরে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করে মিরপুর মডেল থানা। গ্রেফতার পাঁচজন হলেন, ফখরুজ্জামান তপু ভূইয়া (৪৫), মোঃ মোবারক হোসেন (৩৪), মোঃ খোকন মিয়া (৪৩) এবং মোঃ মুশফিকুর রহমান মুন্সি (৩৫)।
Advertisement
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইবনে সিনার উর্ধতন কর্মকর্তা সেজে ইলেক্ট্রো মার্ট নামের একটি দোকান থেকে ২৫টি কনকা সিলিং ফ্যান কেনেন। এরপর ফ্যানের টাকা চাইলে ক্যাশ নেই উল্লেখ করে একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় একাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষরের সাথে চেকে করা স্বাক্ষরের কোন মিল নেই, এমনকি এ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নামের সাথেও মিল নেই। এদিকে এই সুযোগে ফ্যান নিয়ে পালিয়ে যান ফখরুজ্জামান ও তার চক্র। পরে থানায় অভিযোগ করলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি দল গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
পরের জায়গা, পরের ভবন দেখিয়ে প্রতারণা
ফখরুজ্জামান ও তার চক্রের প্রতারণার মূল হাতিয়ার ছিল পরের জায়গা এবং পরের ভবন। তারা প্রথমে যেকোন একটি নির্মাণাধীন ভবন রেকি করেন। পরে সুযোগ বুঝে নিজেদেরকে সে ভবন নির্মাণের ঠিকাদার পরিচয় দেন। ভবন নির্মাণে ক্যাবল প্রয়োজন বলে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে ক্যাবল কিনে আনেন। এরপর ক্যাশ টাকা নেই বলে তাদেরকে চেক দেন। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় সেই একাউন্টে টাকা নেই! সেখানে দেওয়া স্বাক্ষরও ভুয়া! এদিকে এই ফাঁকে সেই ক্যাবল নিয়ে পালিয়ে যান ফখরুজ্জামান ও তার চক্র। এইভাবে এই চক্র গোপালগঞ্জ থেকে প্রায় সোয়া লাখ টাকার, মৌলভীবাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকার, কিশোরগঞ্জ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার, সুনামগঞ্জ থেকে সোয়া লাখ টাকার, মিরপুর থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার পণ্য নিয়ে পালিয়ে যান।
ভুয়া চেকে পণ্য ক্রয়!তার নাম ফখরুজ্জামান তপু ভুইয়া। কিন্তু তার চেকে নাম ইকবাল হোসেন!ভুয়া নাম দিয়েই ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন তিনি। পণ্য কেনার পর সেই একাউন্টেরই চেক দেন তিনি! কিন্তু ব্যাংকে দেখা যায় ইস্যুকৃত চেকে সেই স্বাক্ষরও ভুয়া!
Advertisement
কখনও ঠিকাদার, কখনও চেয়ারম্যান! ফখরুজ্জামান একজন প্রতারক। কিন্তু তিনি কখনও সাজেন ঠিকাদার, আর কখনও সাজেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান! ঠিকাদার সেজে নির্মাণাধীন ভবনের জন্য ক্যাবল কেনার নামে প্রতারণা করেন। আবার কখনও প্রতিষ্ঠান চেয়ারম্যান বা উর্ধ্বতন কর্মকতা সেজে প্রতারণা করেন। সর্বশেষ ইবনে সিনা হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্মকতা সেজে ২৫ টি ফ্যান কেনার ভান করে সেগুলো নিয়ে পালিয়ে যান।
জেলায় জেলায় ঘুরে প্রতারণা করেন ফখরুজ্জামান ফখরুজ্জামান এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরে ঘুরে প্রতারণা করেন। তার দলে ড্রাইভার আছেন একজন। সেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এক জেলায় প্রতারণা করে পালিয়ে এসে অন্য জেলায় যান। এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গোপালগঞ্জে প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে।
আইপিএল জুয়ায় প্রবাসী থেকে প্রতারক! ফখরুজ্জামান ছিলেন প্রবাসী। তিনি সৌদি আরব থাকতেন। সেখানেই চাকুরি করতেন। আয়ও ভাল ছিল। কিন্তু আইপিএল জুয়ায় তার দুর্দিন নেমে আসে। আইপিএল অনলাইন জুয়ায় ১০ লক্ষাধিক টাকা খোয়ানোর পর দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর হয়ে যান প্রতারক।
Advertisement