ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি).ঢাকা প্রতিনিধি, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : গুলশানের বহুতল আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’জন মারা গেছেন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের শুরু বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি নিশ্চিত করতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে তদন্ত দলটি।
Advertisement
ওই ভবনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভবনে আগুন নেভানোর সব ব্যবস্থা ছিলো। সঠিক সময়েই বেজেছিলো ফায়ার অ্যালার্মও। তবে, নিরাপত্তাকর্মী বা বাসিন্দাদের কেউ আগুন নেভানোর ব্যবস্থাগুলো ব্যবহার জানতেন না। এই বিষয়ে কারও অনুশীলন নেই, মহড়াও হয়নি।
গুলশানের ভবনটির ৭ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত এখনও স্পষ্ট পোড়া দাগ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডুপ্লেক্স নকশার ১৩ তলা ভবনের ছয়টি ছয়টি ফ্লোর।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে সোমবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায় তদন্তকারিদের বিভিন্ন দল। ঘটনাস্থল সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন রকম আলামত।
নিরাপত্তার কারণে ভবনটির ডুপ্লেক্স এপার্টমেন্টগুলোর মালিক ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট ছাড়া আর কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তদন্ত দল বিভিন্ন ধরনের আলামতও সংগ্রহ করেছে।
Advertisement
আধুনিক স্থাপত্য নকশার ভবনটিতে ছিলো আগুন নেভানোর সব রকম ব্যবস্থা। কিন্তু ছিলো না আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ। তাই আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি বিপদে কোন কাজেই আসেনি।
সিটি করপোরেশন, রাজউক কিংবা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কেউই তাদের আগুন নেভানোর উপায় নিয়ে কোন ধারণা দেয়নি। এমনকি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও কোন অনুশীলন করেনি।
অথচ দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় উত্তর সিটি কর্পোরেশনেই আছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বড় একটি প্রকল্প। এ খাতে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরেরও আছে প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।
Advertisement
কিন্তু এর কি সুবিধা পেলেন নগরবাসি- এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের কণ্ঠে ক্ষোভই প্রকাশ পেলো। জানালেন, সামান্য প্রশিক্ষণ ও মহড়া হলে জানমালের ক্ষতি এড়ানো যেতে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে উত্তরের মেয়রও স্বীকার করলেন, ভবনের বাসিন্দারা আগুন নেভানোর যন্ত্র ব্যবহার করলে ক্ষতির পরিমান আরও কম হতো।
তিনি বলেন, আগুন যে কোনো সময়ই লাগতে পারে। ভবনটি সব নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। কিন্তু এতো সুন্দর ভবন অথচ আগুন লাগল। জরুরি পরিস্থিতির জন্য ফায়ার ড্রিল করার মতো গার্ড ও বাসিন্দারা প্রশিক্ষিত ছিলো কি না তা জানা নেই। সাধারণত থাকে না।
মেয়র দাবি করেন, আমরা ফ্যাক্টরিতে বা গার্মেন্টসে প্রতিনিয়ত অগ্নিমহড়া ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু বাসা-বাড়িতে সাধারণত সেটা হয় না। সত্যিকার অর্থে ফ্ল্যাট কেনেন কিংবা নিজে বাড়ি করেন, সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অগ্নি সচেতনতামূলক কার্যক্রম আছে। বই দিয়েছি, দেয়া হচ্ছে মহড়া। সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন সোসাইটি রয়েছে যেমন গুলশান সোসাইটি, বারিধারা সোসাইটি তারা যদি এগিয়ে আসে আমাদের মহড়ায় অংশ নেয়, কেন অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে? ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে? তা যদি শেখেন তাহলে অনেকটা সহজ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ভবনটি বিল্ডিং কোড মেনেই করা হয়েছে। আর্থিং লাইন ও ইলেক্ট্রনিক লাইন একই পাইপে উঠেছে। দুই লাইনের মাঝে সেপারেশন থাকে। সেটা যদি না থাকে বা মাঝে যদি কোনও দাহ্য পদার্থ থাকে তাহলে কিন্তু সেপারেশন হলো না।
তিনি আরো বলেন, সেটা আমি ইঞ্জিনিয়ার ও ফায়ার সার্ভিসকে দেখতে বলেছি। সেন্ট্রাল এসি ছিল। সেটা থেকে কোনও কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে কি না সেটা তদন্ত হবে। ফায়ার সার্ভিস আগুনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করেছে।
মেয়র বলেন, আমি শুধু অনুরোধ করবো এই বিপদের সময় জনগণ যেন রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে না থাকে। এটা কিন্তু আমাদের উদ্ধারকাজে অনেক পেছনে ফেলেছে। না হলে এই উদ্ধারটা (আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা) আমরা দুই ঘণ্টা আগে করতে পারতাম।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। ঢাকা উত্তর সিটি পানি দিয়েছি। সেনাবাহিনী, ঢাকা ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিস পানি দিয়েছে। সবাই আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। আমাদের ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো দরকার।
এদিকে, ভবন নির্মানে জড়িত প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী বলেন, সব নিয়ম মেনেই ভবনটি নির্মান করা হয়েছিলো। তবে লিফটের বিদ্যুৎ সংযোগস্থল থেকে আগুন লাগতে পারে।
অন্যদিকে আগুনে আহত এক নারীর চিকিৎসা চলছে বার্ন ইন্সটিটিউটে। তাঁর শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত নন। আগুনের ঘটনায় মধ্যরাতে রাজু নামে আরেকজন মারা যায় সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ নিয়ে এই ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলো।