শহীদ মিনারে জুতা পায়ে এডিসি-শিক্ষা কর্মকর্তা, হলো নাচ-গানও

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পটুয়াখালী প্রতিনিধি,শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : পটুয়াখালী জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, গান ও নাচের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টা থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের ওপরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান চলে।

Advertisement

সরেজমিন দেখা গেছে, শহীদ মিনারকে কাপড় দিয়ে ঢেকে বানানো হয়েছে মঞ্চ। সেখানে জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হুমায়ূন কবির, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুহা. মুজিবুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র শীল ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি বড়াল। তাদের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে দিয়েই সেখানে নাচ ও গান পরিবেশন করেছে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে অতিথি, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ প্রায় তিন হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।

patuakhali4

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘জুতা পায় দিয়ে শহীদ মিনারে ওঠা নিষিদ্ধ- এটা শিক্ষকরা ছাত্রীদের শিক্ষা দেবেন। অথচ শিক্ষকরাই জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে আছেন। শহীদ মিনারে জুতা পায়ে পুরস্কার বিতরণ করার বিষয়টি আমার কাছে খারাপ লেগেছে। তবে কিছু বলতে পারিনি, কারণ আমার বাচ্চা এই স্কুলেই পড়ে।’

Advertisement

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি এবং বাংলায় কথা বলতে পারছি। ভাষা শহীদের প্রতি সম্মান ও স্মরণীয় রাখার জন্যই শহীদ মিনার। সেখানে নাচ-গান বা জুতা পায়ে ওঠা ঠিক না, এ বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকা উচিত।’

patuakhali5

পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদ মিনার কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল- এতে কোনও সমস্যা নেই। আমাদের প্রোগ্রামগুলো ওখানে করার জন্যই (শহীদ মিনার) মঞ্চের মতো করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে আমরা এভাবে শহীদ মিনারে কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান করে আসছি, এতে কোনও সমস্যা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিসি স্যারের আসার কথা ছিল, কিন্তু আসেননি। আর পুলিশ সুপার স্যার ব্যস্ততার কারণে পরে এসেছেন। তবে পুরস্কার বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হুমায়ূন কবির, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুজিবুর রহমান ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের সবার পায়ে জুতা ছিল।’

patuakhali3

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি বড়াল বলেন, ‘অনুষ্ঠান করার জন্যই শহীদ মিনার একসঙ্গে বড় করে করা হয়েছে। আমারা করিনি, শিক্ষা প্রকৌশলীরা করেছেন।’

এ বিষয়ে পটুয়াখালী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদ মিনার হলো ভাষা শহীদদের সম্মানের স্থান। শহীদ মিনার আর অনুষ্ঠানের মঞ্চ একসঙ্গে বানানোর কোনও সুযোগ নেই।’

patuakhali2

পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুজিবুর রহমান বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুল স্বীকার করেছেন। তাকে ক্ষমা করা যায় না? তাছাড়া আপনি পটুয়াখালীর একজন সাংবাদিক, এর আগেও ওখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছেন তারা। আপনারা নিষেধ করলে গতকাল এরকম ভুল হতো না।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হুমায়ূন কবির বলেন, ‘অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বিগত দিনে সেখানেই অনুষ্ঠান করে আসছেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া কাপড় দিয়ে এমনভাবে ঢাকা ছিল, বাইর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি শহীদ মিনার।’

patuakhali1

এ বিষয়ে জানতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলবো।’ পরে কল দিলেও একই কথা বলেন তিনি।

Advertisement