‘দায়মুক্ত হতে চাই মেঘের কাছে’ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : মেঘের কাছে দায়মুক্ত হতে চাই আমরা। তাকে যেন বলতে পারি, তোমার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার হয়েছে।তুমি পেয়েছো নাগরিক অধিকার। নাগরিক হিসেবে তার বিচার পাওয়ার যে অধিকার স্পষ্ট করে দিয়েছে আমাদের সংবিধান।আমরা কি সংবিধানে প্রদত্ত সেই অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি সাগর-রুনীর সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ এর? পারিনি। ১১ বছরেও সাগর-রুনী হত্যা মামলার সুরাহা হয়নি। সংবাদ মাধ্যমেও `সুরাহা’ শব্দটিই ব্যবহার করে।

সুরাহার সঙ্গে শুরুর সম্পর্ক আছে। অথচ সেই মামলা প্রকৃত অর্থে শুরুই হয়নি। বিচারককে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হলে তদন্ত প্রতিবেদন পেতে হবে। ১১ বছরে তদন্তকারী পরিবর্তন হলেও আজ অবধি তদন্ত প্রতিবেদনই জমা হয়নি আদালতে। মাত্র ৯৫ বার সময় চাওয়া হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য। শততম সময় চাওয়ার অপেক্ষা কি করতে হবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য? কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় চেয়ে শততম আবেদনই যে শেষ আবেদন হবে তারও নিশ্চয়তা কি? যেমন বলতে পারছে না কেউ, এমন ঘটনা আমার জন্যও অপেক্ষা করছে কি না?

(সাগর ও রুনী ছেলে মেঘ)


চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো সাধারণত দ্রুত সম্পন্ন করার তাগাদা থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিছু কিছু মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার নজিরও আছে। তবে রায় হওয়ার তুলনায় ঝুলে থাকা মামলাগুলো কয়েকশ গুণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বোঝা যাবে যে প্রকৃত অবস্থাটা কি? এটা কি বিশ্বাস করার মতো,এই দেশে প্রায় অর্ধকোটি মামলা আদালতে ঝুলে আছে। যার মধ্যে চাঞ্চল্যকর মামলাই আছে শতেরও বেশি।

Advertisement

কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা আমাদের হোচট খাইয়ে দেয়। যেমনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ড। বিচার হয়েছে কি এত বছরে? অথচ সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের মতো সাবেক অর্থমন্ত্রীর খুনিদেরও কিন্তু আইনি ছাড় দেয়া হয়নি। যাতে ইনডেমনিটির মাধ্যমে খুনিরা ছাড় পেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আইন করে বিচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খুনিরা দেশে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোই শুধু নয়, রাজনৈতিক দল করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা-ভাবনাও করেছিল। শুধু খুনের মামলা থেকে তাদের রেহাই দিয়ে রক্ষাই করা হয়নি, জাতীয় সংসদে খুনিদের বিরোধী দলের নেতা বানানোরও ইতিহাস আছে এই দেশে। সে আলাদা প্রসঙ্গ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে-তারা ইনডেমনিটি পেয়েছিল। শতাধিক চাঞ্চল্যকর মামলার অভিযুক্তদের আইন মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত রাখা হয়নি। তাদের বিচার করা যাবে না এমন কোনো আইনও দেশে নেই। বাস্তবতা হচ্ছে খুনিরা আইন বহির্ভূত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে বছরের পর বছর।

Advertisement

শুধু সাগর-রুনী হত্যা মামলা কিংবা সাবেক অর্থমন্ত্রী হত্যা মামলাই নয়, চাঞ্চল্যকর শতাধিক মামলা বছরের পর বছর শুধু ঝুলেই আছে। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলাও আছে। ১৯৮৯ সালে সগিরা মুর্শেদ খুন হয়েছিলেন দুষ্কৃতকারীর হাতে। সেই মামলার পরিণতি সম্পর্কে সবাই জানেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে খুন করার দিন মোহাম্মদপুরে একইসময় ১৩ জনকে খুন করা হয় বোমা মেরে।১৯৭৫ সালে খুনের ঘটনা কারা ঘটিয়েছিল তা সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার। শুধু কি তাই? জাতির জনক ও তার পরিবারপরিজনকে হত্যা করেছে যাদের নির্দেশে, যারা নেপথ্যে ছিল তাদের বিচারের শুরুই হয়নি আজও। বহু বছর ধরে শুনে আসছি, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে। কমিশন গঠনের কথাও উচ্চারিত হয়ে আসছে। বাস্তবতা হচ্ছে সবই আলোচনার পর্যায়ে। অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও বিচার কাজ যেখানে থেমে আছে, সেখানে অন্যদেরও বেলায় কী হতে পারে তা বোধ করি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচারই বড় উদাহরণ হতে পারে।

৬ খুন, জোড়া খুন এমন অনেক খুনের মামলাই রয়েছে এ তালিকায়। ঢাকার রাজাবাজারে খুন করা হয়েছিল মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। টেলিভিশনে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন তিনি। ইসলামের ব্যাখ্যাগুলো তিনি টেলিভিশন মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করতেন। বলা হয়ে থাকে তাকে ধর্মান্ধ কেউ হত্যা করতে পারে। এত বছর পরও আমাদের শুনতে হয় খুনিরা এমন হতে পারে। কবে জানা যাবে প্রকৃত খুনিদের পরিচয়? কেউ জানে না আদৌ জানা সম্ভব হবে কি না।

Advertisement

বিলম্বিত বিচারের কারণে অনেক সময় নিরপরাধ মানুষের জীবন শেষ হওয়ার উদাহরণ আমাদের দেশেই আছে। বিনা বিচারে কঠিন সাজার চেয়েও বেশি সময় কাটছে অসংখ্য অভিযুক্ত ব্যক্তির। এমনও দেখা যায় বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাতে কাটাতে অভিযুক্তকে কারাগারেই মারা যেতে হয়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই নিরপরাধ হিসেবে আদালতের রায় পেয়ে থাকেন। কিন্তু এই নিরপরাধ ব্যক্তিকে যখন দিনের পর দিন কারাগারে কাটাতে হয়, তখন এটা অমানবিক হিসেবে চিহ্নিত হতেই পারে।

কখনও আবার বিচার বিভাগ ও প্রশাসন বিভাগের মুখোমুখি অবস্থানের কারণেও মামলা ঝুলে যায়। কষ্ট ভোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তি। তাদের কান্না শোনারও কেউ নেই। অতি সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতের দূরত্ব তৈরি হয়। কতটা বেহাল অবস্থায় পড়েছে বিচারপ্রার্থীরা একটি সংবাদ থেকেই প্রমাণ হয়। এক বিচারপ্রার্থী নাকি আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে বিচার বন্ধ থাকার কারণে। লাখ লাখ মামলা ঝুলে থাকার সঙ্গে হয়তো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিস্থিতির তুলনা হয় না। সেখানে কিন্তু সবই আটকে গেছে। (নিবন্ধ লেখার সময় সংবাদে জানা গেছে-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে যোগদান করতে যাচ্ছেন আইনজীবীরা। কিন্তু আদালতে আইনজীবী না থাকার কারণে বিচারকাজ ব্যাহত হয়েছে, তা স্বীকার করতে হবে।)

চাঞ্চল্যকর শতাধিক মামলার ভিড়ে সাগর-রুনীর হত্যা মামলা ঝুলে থাকবে-এটা যুক্তি হতে পারে না। আমরা সাধারণ মানুষ চাইব সবারই বিচার পাওয়া নিশ্চিত হোক। অন্তত আমাদের যাতে আর বলতে না হয়, সাগর-রুনীর হত্যা মামলার সুরাহা করে মেঘের কাছে আমাদের দায়মুক্ত করা হোক। শুধু সাগর-রুনী নয়, সব অপরাধেরই বিচার হোক। সবাই সংবিধানে উল্লেখিত সুবিচার পাক।