ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ যপ.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে এ মাসেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরু থেকেই কিয়েভকে সামরিক ও বেসামরিক সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেন সেই প্রথম থেকেই অত্যাধুনিক ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান চেয়ে আসছিল।
Advertisement
অনেক আবেদন-নিবেদনের পর সম্প্রতি ট্যাংক দিতে সম্মত হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। খুব শিগগিরই প্রতিশ্রুত ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের পথে যাত্রা শুরু করবে। ট্যাংক পাওয়ার পর এবার যুদ্ধবিমান পেতে ওঠেপড়ে লেগেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। তবে পশ্চিমারা যুদ্ধবিমান দেবে কি না–অনেকের মনে এমন প্রশ্ন রয়েছে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আরও একবার যুদ্ধবিমান সরবরাহের আবেদন জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এদিন এক ঝটিকা সফরে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। সফরকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধবিমানের কথা পাড়েন তিনি।
Advertisement
এদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভাষণও দেন জেলেনস্কি। সেখানে আরও একবার যুদ্ধবিমানের কথা বলেন তিনি। সামরিক পোশাক পরা জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধবিমানের পাখায় ভর করে স্বাধীনতা আসবে।’
তবে যুদ্ধবিমান দেয়ার ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে যুক্তরাজ্য যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান পাইলটদের প্রশিক্ষণ শুরু করতে চায়। ঋষি সুনাকের এক মুখপাত্র এমনটাই বলেছেন। কোন যুদ্ধবিমান চালনা প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, তা নিয়ে হোমওয়ার্ক করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্য সফর শেষে জেলেনস্কি ফ্রান্সের প্যারিসে যাওয়ার কথা। সেখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজও থাকবেন। ম্যাক্রোঁর অফিস থেকে এমনটা জানানো হয়েছে। ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকেও জেলেনস্কি যুদ্ধবিমানের কথা তুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
Advertisement
ইউক্রেন কি যুদ্ধবিমান পাবে?
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সামরিক জোটের কাছে অত্যাধুনিক ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান সরবরাহের আবেদন জানিয়ে আসছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। সংঘাতের এগারো মাসের মাথায় গত সপ্তাহে সেই আবেদনে সাড়া দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। ঘোষণা দেয় ট্যাংক সরবরাহের।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে খুব শিগগিরই ৩২১টি অত্যাধুনিক ট্যাংক পেতে যাচ্ছে কিয়েভ। ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণার পর এবার যুদ্ধবিমান চাইছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। ট্যাংকের মতো ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির কাছে যুদ্ধবিমান চেয়েছিল ইউক্রেন। তবে জেলেনস্কির এমন দাবি সরাসরি নাকচ করে দেয় দেশ দুটি। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি জানিয়েছে, রাশিয়াকে রুখতে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক লেপার্ড ট্যাংক সরবরাহের ঘোষণা দেয়া হলেও কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধবিমান দেয়া হবে না।
গত ২৯ জানুয়ারি আর্জেন্টিনা সফরকালে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ বলেন, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও জেলেনস্কির দাবি অনুযায়ী কোনো অবস্থায়ই যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হবে না।
ওলাফ শলজের সুরেই কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরদিন ৩০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইউক্রেনকে ট্যাংক দিয়ে সহায়তা করলেও এখনই যুদ্ধবিমান দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
তবে যুদ্ধবিমান পাঠানোর ব্যাপারে ভিন্ন কথা বলছে ন্যাটোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফ্রান্স। গত ৩০ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে এক বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার দেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
ম্যাক্রোঁ বলেন, এ ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে কোনো কিছুই বাদ দেয়া হয়নি। তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এখনও যুদ্ধবিমানের জন্য কোনো অনুরোধ জানাননি। এর অর্থ ইউক্রেন চাইলে ‘না’ করবে না তারা।
ফ্রান্সের মতো যুদ্ধবিমান দেয়ার কথা উড়িয়ে দেয়নি ন্যাটোর আরেক প্রভাবশালী সদস্য যুক্তরাজ্য। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সুনাকের মুখপাত্রের বিবৃতিতে তা স্পষ্ট হয়েছে। বিবৃতি অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান পাইলটদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রশিক্ষণ দিতে চায় যুক্তরাজ্য।
যুদ্ধবিমান পাওয়ার ব্যাপারে ইউক্রেনীয় নেতাদের বেশ আত্মবিশ্বাসী বলেই মনে হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ যেমনটা বলছেন। গত রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর মোকাবিলায় ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধবিমানও দিতে একমত হয়েছে। রেজনিকভ আরও বলেন, ‘মিত্রদের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান পথে রয়েছে। এগুলো দিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রুশ বাহিনীর ওপর তীব্র হামলা করা হবে।’
এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান দিতে চায় নেদারল্যান্ডস
গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসই এ বিষয়ে জল্পনা কিছুটা বাড়িয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টের এক সদস্যের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যখন সময় আসবে নেদারল্যান্ডস এফ-সিক্সটিন পাঠাতে পারবে। এটি সরবরাহ করার বিষয়টি একেবারে বাতিল করা হয়নি।
১৯৭০-এর দশকে নির্মিত এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র
এ যুদ্ধবিমান এখন আর কেনে না। তবে বাহরাইন ও জর্ডানের মতো দেশগুলো এখনও এটি কিনছে।
ইউক্রেনে এ যুদ্ধবিমান পাঠানোর বিষয়টি এর নির্মাতা কোম্পানি লকহিড মার্টিনের নজরেও রয়েছে। কোম্পানিটির চিফ অপারেটিং অফিসার ফ্রাঙ্ক সেন্ট জন স্বীকার করেছেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইউক্রেনকে এফ-সিক্সটিন পাঠানোর বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিমানটির নতুন উৎপাদন সম্ভাব্য এ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
ডাচ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পিটার উইননিঙ্গা বলছেন, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়তো সবাইকে একটু নাড়া দিচ্ছেন। তিনি সতর্ক করতে চাইছেন, প্রত্যাশিত সময়ের আগেই ইউক্রেন যুদ্ধবিমান চাইতে পারে।
নেদারল্যান্ডসের কাছে ২৪টি এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান রয়েছে। আগামী বছর এগুলো ব্যবহার বন্ধ করতে চায় দেশটি। তারা নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ ব্যবহার শুরু করেছে। ২০২১ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১২টি এফ-১৬ বিক্রি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এগুলো প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করছে।
ডাচ কর্নেল বলেন, ‘বেশ কয়েকটি এফ-সিক্সটিন অপর দেশগুলোর কাছে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ইউক্রেনকে সরবরাহের জন্য পথ খোলা থাকবে। আমার মনে হয় আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানোর জন্য তারা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে।’