রাজধানীতে মাদকসেবীদের অভয়াশ্রম হয়ে উঠেছে বিহারি ক্যাম্পগুলো। বারবার অভিযান চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না প্রকাশ্যে চলা মাদক ব্যবসা। গত ছয় মাসে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অভিযান হয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ৩৫০ জন মাদক ব্যবসায়ী। তারপরও চলছে অবাধে মাদক কেনাবেচা।
বিজ্ঞাপন
২৪ জানুয়ারি, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প। মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযানে এসে প্রথমে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। তবে, পরে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় মাসে ক্যাম্পগুলোতে অভিযানে ৩৪৬ জন ধরা পড়েছে। কিন্তু মাদক ব্যবসা কি নিয়ন্ত্রণে এসেছে? সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গেলে হানিফ নামে একজন এগিয়ে আসেন।
তিনি জানান, ১০০ টাকা বাড়তি দিলে ক্যাম্পে বসেই মাদকসেবন করা যাবে। হানিফের পিছু পিছু গেলে কথার সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া যায়।
এবার দেখা যাক, ক্যাম্পের অন্য গলিগুলোর অবস্থা। এর নাম সোহেল ওরফে বাবা সোহেল। এসপি-জিআরসি গলিতে এদের রাজত্ত্ব। সঙ্গে আছে সুলতান, বেচু, জুয়েল ও আকরাম। যারা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমিশনে মাদক বিক্রি করে। সৈয়দপুড়িয়া গ্রুপ এ গলি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিচালনা করে বাবু ও বাম দুই ভাই। কাজ দেখভালে আছে ম্যানেজোরও। সেখান থেকে ভাতিজা রুবেল ও লম্বু রানার মাধ্যমে মাদক আসে সেলসম্যানদের হাতে।
বিজ্ঞাপন
ক্যাম্পের বাসিন্দা এক নারী বলেন, ওরা ক্যাম্পে আসে না। তারা মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে। তারা এক ক্যাম্পে থেকে আরেক ক্যাম্পে ব্যবসা করছে। বড় গডফাদার যারা, তারা বাইরে থাকে। লোকজন দিয়ে ব্যবসা করে। রাতের এসে ইয়াবার বিল নিয়ে যায়।
আগে ইশতিয়াক ও পঁচিশ নাদিম ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রক থাকলেও তাদের মৃত্যুর পর ব্যবসা চলে গেছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে।
৭ নম্বর সেক্টরের ডাস্টবিন গলি। এ গলির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে রাব্বানি ও এস কে নাসিম নামে দুই ভাই। ক্যাম্পের চেয়ারম্যান গোলাম জিলানীর ছেলে তারা। মাঠ পর্যায়ে সেলসম্যানের কাজ করছে এই অনিল, রানাদের মতো লোকেরা। ক্যাম্পের বাইরের মূল রাস্তাগুলোর চিত্রও প্রায় একই। প্রকাশ্যেই চলছে মাদকের কারবার। কোন জোরে কার ছত্রছাত্রায় রাজধানীর কেন্দ্রে প্রকাশ্য এমন মাদক ব্যবসা চলছে, সে প্রশ্ন ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে আমরা শতাধিক মামলা দিয়েছি। এর পিছনে তাদের বিরাট সিন্ডিকেট কাজ করে। জটিলতা হচ্ছে, আমাদেরকে একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে আদালতে সোপর্দ করতে হয়। তারা যেকোনোভাবে একটা সময় পড়ে জামিনে বের হয়ে আসে। কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর আবার তারা একই কাজ করে।
বিজ্ঞাপন
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল হালিম বলেন, আমাদের জোনে মাদক-সংক্রান্ত অপরাধগুলোর মামলা বেশি হয়। এরমধ্যে বেশির ভাগই মাদক মামলাগুলোই পাই ক্যাম্প থেকে। মানে হলো মাদক কেনাবেচা ও মাদক সেবন বাইরের এলাকার চেয়ে ক্যাম্পের ভিতরে বেশি। গত দুই বছরে অভিযান পরিচালনা, মামলা দেওয়াসহ আমরা জিরো টোলারেন্স নীতিতে এগোনোর ফলে এগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের অভিযানের বিরুদ্ধে সমর্থন জোগাতে ক্যাম্পের দরিদ্র মানুষদের প্রতি হাতেমতাঈ সুলভ আচরণ করে মাদক ব্যবসায়ীরা। কেউ বিপদে পড়লেই বাড়ায় সহায়তার হাত।
ক্যাম্পের মাদক ব্যবসাকে অর্গানাইজড ক্রাইম বললে ভুল হবে না। কারণ, ক্যাম্পের বাইরে থেকে শুরু করে থানা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সব প্রতিষ্ঠানে সর্বদা পাহাড়ায় থাকে এদের লোক। কোনোরকম অভিযানের আভাস পেলেই খবর চলে আসে ভিতরে। এভাবেই বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাফিয়ারা।