ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সিরিয়া সীমান্তের কাছে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানীর খবর আসছে। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আহতের সংখ্যাও। ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় তুরস্ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান টুইট বার্তায় বলেন, আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব সবাই মিলে এই ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করবো এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনবো।
তুরস্ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে উদ্ধারকারীদের মধ্যে সমন্বয়ে সহায়তা করতে জনসাধারণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে। ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়।
Advertisement
প্রবল ঝাঁকুনিতে বহু ভবন ধসে পড়েছে, সেসব ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে। তুরস্কের বিভিন্ন শহর থেকে ভবন ধসে পড়ার খবর আসছে। কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে।
উভয় দেশে শত শত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া জীবিতদের রক্ষা করতে উদ্ধারকারীরা কাজ শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে।
তুরস্কের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সানলিউরফার গভর্নর সালিহ আয়হান বলেন, আমাদের অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে।
Advertisement
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, নিহত ও আহতের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।
আন্যদিকে সিরিয়া কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কমপক্ষে ২৩৭ জন নিহত ও ৬৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
নিহতদের বেশিরভাগই আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতাস অঞ্চলের বাসিন্দা। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ার মানবিক সংগঠন ‘হোয়াইট হেলমেট’। সেখানে উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮ এবং এটি স্থানীয় সময় ভোর সোয়া চারটার দিকে আঘাত হানে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭.৯ কিলোমিটার। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারাসহ অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে।
প্রতিবেশি দেশ সিরিয়া, লেবানন এবং সাইপ্রাসেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। অনেক ভবন ধসে পড়েছে এবং বহু মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছে। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন বহু মানুষ। সাঁড়াশি উদ্ধার অভিযান চলছে। এরিমধ্যে সেনাবাহিনীও উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
Advertisement
ভূমিকম্পের কারণে লেবাননের কিছু বাসিন্দা বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। লেবানন উপকূল থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাস ও লেবাননের মাঝে অবস্থিত সমুদ্রে ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রায় ৪০ সেকেন্ড ধরে লেবাননে ভূকম্প অনুভূত হয়। ইসরাইলে ভূকম্প অনুভূত হলেও কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা যায়নি।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। এখনও ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানীর খবর আসছে।
স্থানীয় সিসমোলজিস্টরা ভূমিকম্পটির মাত্রা ৭.৪ ছিল বলে জানাচ্ছেন। তারা জানান, ভূমিকম্পটি আঘাত হানার কয়েক মিনিট পরেই দ্বিতীয় আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়। তবে বিবিসি বলছে, প্রথমবার ভূমিকম্প আঘাত হানার পরও বিভিন্ন মাত্রার আরও ১৮টি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। এর আগে সর্বশেষ ১৯৩৯ সালে তুরস্কে এ ধরনের ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেবার ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউএসজিএস। এ ধরনের ভূমিকম্প খুবই বিরল।
গত ২৫ বছরে মাত্র ৭বার তুরস্কে ৭ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। তবে আজকের ভূমিকম্পটি সবচেয়ে শক্তিশালী। ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলো।