ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : ঢাকা ওয়াসায় বিল বিতরণের জন্য আউট সোর্সিং করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি কর্মী। যাদের পেছনে মাসে ব্যয় চার কোটি টাকার বেশি। অথচ সেই বিল বিতরণের জন্যই মাসে ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি কুরিয়ার সার্ভিসকে। এমন সব আজগুবি কাণ্ড হচ্ছে ঢাকা ওয়াসায়।
Advertisement
অভিযোগ উঠেছে, কয়েকটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে মূলত ওয়াসার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাই আউট সোর্সিংয়ের নামে নিয়োগ বাণিজ্য করছেন।
জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসায় বর্তমান জনবল পাঁচ হাজার ১৪০ জন। স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি আরও তিন ধরনের কর্মী নিয়োগ দেয় ওয়াসা। যাদের মধ্যে আছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, নো-ওয়ার্ক নো-পে অর্থাৎ রোজভিত্তিক কর্মী এবং আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মী।
ওয়াসার ২০২০-২১ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, ওই সময় আউট সোর্সিং কর্মী ছিল এক হাজার ৮৭০ জন। এখন তা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ১৭০ জন। যাদের বেতন বাবদ মাসে চার কোটি টাকারও বেশি খরচ করছে ঢাকা ওয়াসা।
কাগজে পত্র বলছে ৯টি আউট সোর্সিং কোম্পানির দুই হাজার ১৭০ লোক ওয়াসায় কাজ করছেন। কিন্তু নিয়োগ পাওয়ারা বলছেন, আউট সোর্সিং কোম্পানি নয়, তাদের নিয়োগ দিয়েছেন ওয়াসারই কর্মকর্তারা।
কাগজ ঘেঁটে দেখা গেছে, মতিঝিলে সিসি ক্যামেরার ব্যবসা করা মর্ডান টেলিকমের ১১৫ জন আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ওয়াসা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বলছে তাদের কেউ ওয়াসায় কাজ করছেনা।
এদিকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নামে সবচেয়ে বেশি ৯২৩ জন আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ দেখিয়েছে ওয়াসা। বাস্তবতা হলো, এই সমিতির নাম ব্যবহার করে লোকবল নিয়োগ দিয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
দ্বিতীয় সবোর্চ্চ আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ হয়েছে এক্সপ্রেস ওয়ান লিমিটডের নামে। কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা করা এই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজারও জানেন না তার কত লোক নিয়োগ দিয়েছে ওয়াসা।
১৩৪ জন আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ দেখানো হাউজিং ট্রেড সেন্টারের কোনো হদিস মেলেনি। পাওয়া যায়নি ৫২ জন আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ দেখানো রুটস ডেভলপমেন্টেও। একইভাবে সাজেদা অ্যান্ড কোং, একটিভ ইন্টারন্যাশনাল ও নগরসেবার নামে নিয়োগ দেখানো হলেও এরা কেউই আউট সোর্সিং কোম্পানি নয়।
ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় বহুমুখী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন জানান, ২০১৮ সাল পর্যন্ত আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহ করতো ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুমুখী সমবায় সমিতি। কিন্তু কমিশন বাণিজ্যের জন্য তাদের বাদ দিয়ে নামসর্বস্ব কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে চার বছরে আউট সোর্সিং কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় পাঁচ গুণ করা হয়েছে।
বিধান অনুযায়ী, সবোর্চ্চ দুই কোটি টাকার পূর্ত কাজ করার ক্ষমতা আছে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। তাই ২১৭০ জনকে ১০টি জোনে আলাদা করে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। কৌশলে নিয়োগের প্রতিটি লটের কাজের মূল্য দেখানো হয়েছে দুই কোটি টাকার চেয়ে কম। অর্থ্যাৎ এক কোটি ৯৯ লাখ ৯ হাজার টাকা। কোথাও আবার এক কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
আউট সোর্সিং কর্মীদের অন্যতম কাজ বিলিং সহকারী হিসেবে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি পানির বিল বিতরণ করা। কিন্তু বিশাল এই জনবল বসিয়ে রেখে সেই দায়িত্ব আবার দেওয়া হয়েছে চারটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে। এরমধ্যে একটি কুরিয়ার সার্ভিসকে দেওয়া হচ্ছে বিলপ্রতি ৯ টাকা। বাকি তিনটি কুরিয়ারকে দেওয়া হচ্ছে আট টাকা করে।
এখানেও টেন্ডার প্রক্রিয়ার বাইরে পছন্দের প্রতিষ্ঠানই কাজ পেয়েছে। যেমন নতুন বাজারের এক্সপ্রেস টু বিজনেস সার্ভিসেসকে ৮ ও ৯ নং জোনের প্রায় ৮৫ হাজার বিল বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে কাজ পাওয়ার সময় এই প্রতিষ্ঠানটির কুরিয়ার সার্ভিসের কোনো নিবন্ধনই ছিলো না।
বিলপ্রতি আট টাকার বিনিময়ে ৩, ৫ ও ১০ নম্বর জোনের বিল বিতরণের দায়িত্ব পেয়েছে মধুবন কুরিয়ার সার্ভিস। ৯ টাকা দরে ১, ২, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর জোনের বিল পৌঁছানোর কাজ করছে কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার সার্ভিস।
মোট তিন লাখ ৮৪ হাজার গ্রাহকের বিল বিতরণের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর পেছনে মাসে খরচ হচ্ছে ৪০ লাখ টাকা। সবগুলোর জোনে কাজ দেয়ার পরও এটিকে পাইলট প্রকল্প দেখিয়ে কৌশলে ওয়াসা বোর্ডকে পাশ কাটিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
ওয়াসা বোর্ড বলছে, এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তারা পুরোপরি অন্ধকারে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এসব বিষয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত করে ওয়াসায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।