ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বগুড়া প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : দেশের প্রথম সারির সব গণমাধ্যম ছুটছে তার পেছনে। সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ’খানেক ইউটিউবার। কারণ এ সংবাদ কর্মীদের দিকেই দেশবাসী তাকিয়ে ছিল বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলমের খবর জানতে। জনগণ আর মিডিয়ার তুমুল আগ্রহ দেখে হিরো আলমের নিজেরও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।
Advertisement
আশরাফুল আলমের সাঈদের জিরো থেকে হিরো হয়ে ওঠার গল্পটা থেকে এখন অনেকে প্রেরণাও খুঁজে পান। পাবেন নাই বা কেন! ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি বগুড়ার এরুলিয়ায় জন্ম নেয়া আশরাফুল আলমের ছিল না তথাকথিত সামাজিক অবস্থান, শিক্ষা কিংবা অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। সেখান থেকে আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে তার খবর।
দারিদ্রের কারণে মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে স্কুল থেকে বিদায় নেয়া আশরাফুল শুরু করেন সিডি ক্যাসেটের ব্যবসা। যদিও ব্যবসার হাতে খড়ি তার শিশু বয়সেই। মায়ের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আচার বিক্রির গল্পও তার এলাকার সবার জানা। সিডি ব্যবসায় ভাটা পড়লে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ক্যাবল নেটওয়ার্ক বা ডিসের ব্যবসা। এরপর আর দারিদ্র্যের মুখ দেখতে হয়নি আলমকে। কঠোর পরিশ্রমে নিজের ও পরিবারের সুদিন ফেরান।
ক্যাবল অপারেটর ব্যবসার সময় স্বপ্ন দেখেন মডেল হবার। সখের বশে বেশ কিছু মিউজিক ভিডিওতে মডেলিং করেন। প্রচার করতেন নিজের সিডি চ্যানেলে। পরে ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতে শুরু করেন মিউজিক ভিডিও। ২০১৬ সালের দিকে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে ভাইরাল হয় তার ভিডিও। ট্রোল আর মিমে হিরো আলমের পরিচিতির বিস্ফোরণ ঘটে।
২০১৭ সালের ১১ আগস্ট মুক্তি পাওয়া মার ছক্কা হিরো আলম অভিনীত প্রথম ছবি। এর বাইরে বাংলাদেশে বেশকিছু বিজ্ঞাপন ও শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন। তবে হিরো আলমের পরিচিতি মূলত নেতিবাচক অর্থে। তার অদক্ষ অভিনয় আর বাচিকের আঞ্চলিকতার কারণে তার কন্টেন্টগুলো নিয়ে বিদ্রূপ করতেন নেটিজেনরা।
Advertisement
২০১৮ সালে হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠে আসেন হিরো আলম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া ৪ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চেয়ে না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচন করেন। সেবার ৬শ’র কিছু বেশি ভোট পেয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ভোটের দিন প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে ভোট বর্জন করেন হিরো আলম। ততদিন পর্যন্ত হিরো আলম ছিলেন মানুষের হাসির পাত্র। তবে মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে আমূল পরিবর্তন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত মাস খানেকে তার ভিডিওর নিচে মন্তব্য পড়লেই বোঝা যায় আঘাত পেতে পেতে নিরেট হচ্ছেন হিরো আলম। তার সাহসী মন্তব্য মন জয় করছে মানুষের।
২০২৩ সালের উপনির্বাচনে বগুড়া ৪ ও ৬; দুটি আসন থেকেই মনোনয়ন জমা দেন হিরো আলম। প্রথমে মনোনয়ন বাতিল করলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে ভোটে লড়াইয়ের সুযোগ পান হিরো। তবে এবার সিংহ নয় একতারা প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে নামেন তিনি। এরপর গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে গণ মানুষের মন জয় করতে থাকেন তার সরলতা দিয়ে। বিশেষ করে কাহালু নন্দীগ্রাম আসনে তার জনপ্রিয়তার জোয়ার ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরে যান আলম।
পিতা আব্দুর রাজ্জাক আর মা আশরাফুন বেগমের ছেলেকে নিয়ে এখন বিবিসি, এনডিটিভি, ব্রুট ইন্ডিয়ার মতো জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গণ ও যোগাযোগ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে। সে খবর বিদ্রূপের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের গল্প। তা থেকে প্রেরণা খুঁজে পাচ্ছেন মানুষ। হিরো আলমের মাঝে সত্যিই নিজেদের হিরোকে খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই।