ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রাম প্রতিনিধি,বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে পুলিশের সোর্স কায়েস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। মূলত পরিচয় ফাঁস করে দেয়ায় হুমায়ুন কবির নামে আরেক সোর্সের পরিকল্পনায় কায়েস খুনের শিকার হন। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হুমায়ুনসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মনসুরাবাদে নগর ডিবি বন্দর ও পশ্চিম বিভাগের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-বন্দর ও পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন এসব কথা জানান। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. হুমায়ুন কবির প্রকাশ মাসুদ তালুকদার (৪৫), মো. খোকন প্রকাশ সোনা মিয়া (৩১), মো. রফিকুজ্জামান সানি মিয়া প্রকাশ আফরান (২২), মো. নজরুল ইসলাম (২৩), মো. রায়হান (২১) এবং আব্দুল কাদের জীবন (২২)।
Advertisement
ডিসি মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, প্রায় ৪ মাস আগে হত্যার শিকার মো. কায়েস ও গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির মাদক সংক্রান্ত কাজে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে যান। মাদকের ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে আসামি মো. হুমায়ুন কবির প্রকাশ মাসুদ তালুকদার ও মো. কায়েস চট্টগ্রাম চলে আসেন। পরে হুমায়ুন রাঙ্গামাটিতে ওই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে পুলিশের সোর্স বলে আটক করে এবং বেদম মারধর করে। এ সময় তার অণ্ডকোষে ইট দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। সেখান থেকে তিনি কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে চট্টগ্রাম চলে আসেন এবং কায়েসই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে তার সোর্সের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছে বলে পাহাড়িরা জানিয়েছে। তাই সেই থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি হুমায়ুন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় কায়েসকে মেরে ফেলবে।
তিনি বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে থেকেই কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল হুমায়ুন। কায়েসকে সেটা কখনো বুঝতে দিতো না, উল্টো বন্ধুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া কায়েসকে দেখা করতে বললে কায়েস কখনও ৩-৪ জন সঙ্গে নিয়ে আসা ছাড়া দেখা করতো না।
তাই কয়েকবার কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করেও কোনো ক্ষতি করতে পারেনি হুমায়ুন। এর মাঝে আসামি হুমায়ুন কায়েসকে কীভাবে হত্যা করবে সে বিষয়ে কায়েসের ঘনিষ্ঠ একজনের সঙ্গে আলোচনা করে। এতে ওই ব্যক্তি এক লাখ টাকা মধ্যস্থায় রাজি হন। পরে গত ২০শে জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় কায়েসের মোবাইলে ফোন দিয়ে তাকে মইজ্জারটেক আসতে বলে হুমায়ুন। এরমধ্যে আসামি হুমায়ুন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কায়েসকে মেরে ফেলার জন্য তার (কায়েস) ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে তার লোকজন নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলে। কায়েস মইজ্জারটেক এসে হুমায়ুনের সঙ্গে দেখা করলে সে তাকে চা-নাস্তা খাওয়ায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে ঘোরাঘুরি করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। পরে সন্ধ্যা পার হলে একটি কাজের কথা বলে কায়েসকে সিএনজিতে তুলে কলেজ বাজারের দিকে ঘুরে চরলক্ষ্যা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রাস্তায় সিএনজিতে কায়েসকে বসিয়ে রেখে হুমায়ুন নেমে যায় এবং তিনি পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত থাকতে বলে মইজ্জারটেক চলে যায়।
Advertisement
ডিসি বলেন, আসামি হুমায়ুন দ্রুত মইজ্জারটেক থেকে আরেকটা সিএনজি নিয়ে আপ-ডাউন ভাড়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে এসে কায়েস বসে থাকা সিএনজির পেছনে এসে অবস্থান করে। পূর্বপরিকল্পনা মতো সিএনজিতে বসে থাকা কায়েসকে দু’দিক থেকে উপর্যুপরি ছুরি এবং ভোমর দিয়ে আঘাত করতে থাকে। ছুরির আঘাতে কায়েস চিৎকার দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক ড্রেনের দিকে দৌড় দেয়। সেখানেও হত্যাকারীরা পুনরায় তাকে ধরে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কায়েসের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরে তাকে বহনকারী সিএনজি স্টার্ট করতে দেরি করায় আসামি হুমায়ুন তার ভাড়াকৃত সিএনজিতে ৪ জনকে তুলে নেয় এবং রায়হান ও জীবন মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তারা সবাই মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।’ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও এক আসামি পলাতক রয়েছে জানিয়ে নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ৬ জনের মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র ও মাদক মামলা রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে কর্ণফুলী উপজেলার সিডিএ আবাসিক এলাকায় সড়কের পাশ থেকে পুলিশের সোর্স মোহাম্মদ কায়েসের (৩৩) ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ।