ট্রান্সজেন্ডার শিশিরকে কোনো বাধাই দমাতে পারেনি

SHARE

শিশির বিন্দু

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজবাড়ী প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ : শিশির বিন্দু যখন প্রাথমিকে পড়েন তখন থেকে মেয়েদের মতো স্বভাব ও চলাফেরা ছিল তাঁর। বাবা বলতেন, ‘তুমি ছেলে হয়ে কেন মেয়েদের কাজ করতে চাও?’ যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন তাঁর মধ্যে আরও পরিবর্তন আসে। বন্ধুরা তাঁর সঙ্গে মিশত না, ক্লাসে যেতেও তাঁর ভালো লাগত না। তবে সব বাধা ডিঙিয়ে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর এইচএসসি ও স্নাতকের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

Advertisement

ট্রান্সজেন্ডার শিশির বিন্দুর সংগ্রাম শেষ হয়নি। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের মাস্টার্সে পড়ছেন। পাশাপাশি রাজবাড়ীতে বুটিক হাউস খুলেছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন তাঁর।

রাজবাড়ীর সোনাকান্দর গ্রামের হান্নান শেখের সন্তান শিশির বিন্দু। তাঁরা তিন ভাইবোন। ব্র্যাকের বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন আল্লাহ নেওয়াজ খায়রু একাডেমিতে। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে। মাস্টার্সে পড়ছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে।

Advertisement

শিশির জানান, সবাই যখন তাঁকে এড়িয়ে চলত, তখন নিজের কমিউনিটির খোঁজ পেয়ে তাঁদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে শুরু করেন বাসা ভাড়া নিয়ে। সেলাইয়ের কাজ করে জোগাড় করতেন বাসা ভাড়া, পড়াশোনা ও খাওয়ার টাকা। সহপাঠীরা নেতিবাচক মন্তব্য করত। এ কারণে নিয়মিত কলেজে না যাওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি।

পাস কোর্সে ভর্তি হয়ে স্নাতকের গণ্ডি পার হন শিশির। এরই মধ্যে ‘উত্তরণ’ নামে একটি সংস্থার সহযোগিতায় রাজবাড়ীর পান্না চত্বরে বুটিক হাউসের ব্যবসা শুরু করেন। ভাইয়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তবে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ায় আর্থিক কষ্টে পড়েছেন।

শিশির বিন্দু বলেন, ‘কষ্ট করে সৎ পথে বাঁচার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন সহসভাপতির পদ দিয়ে সম্মান দেখিয়েছে।’ দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ছাত্রনেতা- এটি ভাবতে ভালো লাগে তাঁর।

রাজবাড়ীর সামাজিক সংগঠন বিজ্ঞান চেতনার আহ্বায়ক আ ন ম মহিতুজ্জামান বেলাল বলেন, তাঁর নিজের সন্তানও ট্রান্সজেন্ডার। তাকে সব সময় সমর্থন করেছেন। বন্ধুরাও তাকে সাহায্য করেছে।

মাগুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান আব্দুল্লাহ আল সাইফ বলেন, লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা অভিনয় টাইপের, যেটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। ৯৯ শতাংশ মানসিক হওয়ায় শুরুতে লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা করানো উচিত।

রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের মনোবিজ্ঞন বিভাগের প্রভাষক নাজমুস সাকিব বলেন, ট্রান্সজেন্ডারদের বুঝতে দেওয়া উচিত নয় যে তাঁরা অন্যরকম। তাঁদের সুযোগ দিলে দেশ ও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারে।