ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুমিল্লা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ : ভুয়া পরিচয় দিয়ে ২২ বছর কারারক্ষীর চাকুরী করার পর প্রতারক তাজুলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ADVERTISEMENT
জানা গেছে, প্রতারক মো. তাজুল ইসলাম (৪২) ব্রাহ্মণপাড়া দক্ষিণ শশীদল এলাকার মো. কালা মিয়ার ছেলে।
তাজুলের বাড়ি অল্লাশি করে তিন সেট কারারক্ষী ইউনিফর্ম, একটি কারারক্ষী জ্যাকেট, একসেট কারারক্ষী রেইনকোট, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে কুমিল্লার শাকতলা র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
মেজর সাকিব হোসেন জানান, ভুয়া পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কারারক্ষীর চাকুরী করে গেছেন আটক প্রতারক তাজুল। গত ২০০১ সালে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার শাহজাহানপুর গ্রামের মো. নুর উদ্দিন খানের ছেলে মো. মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজির হয়ে শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের স্থায়ী ঠিকানায় নিয়োগপত্র পরবর্তীতে ডাকযোগে প্রেরণ করা হবে বলে জানায়। একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে উক্ত প্রতারকও পরীক্ষা দেয় এবং অকৃতকার্য হয়। এরই মধ্যে প্রতারকসহ আরও দুইজন মঈন উদ্দিন খানের বাড়িতে যান ও নিজেদের কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঘুষ দিলে নিয়োগপত্র প্রদান করা হবে অন্যথায় তার নিয়োগ বাতিল করা হবে বলে জানায় মঈনকে। কিন্তু মঈন ঘুষ দিয়ে চাকুরী করবে না বলে টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়।
তিনি আরও জানান, প্রতারণার শিকার মঈন উদ্দিন খান নিয়োগপত্র না পাওয়ায় আশাহত হয়ে বেসরকারি চাকুরী শুরু করেন। এরই মধ্যে প্রকৃত মঈন উদ্দিন খানের ঠিকানা ব্যবহার করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার স্থলে কারারক্ষী হিসেবে চাকুরী শুরু করেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারাগারে চাকুরী সম্পন্নও করেন ও সর্বশেষ ওই প্রতারক সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ছিলেন।
মেজর সাকিব জানান, এরই মধ্যে জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন প্রাপ্তির জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হলে প্রতারক প্রকৃত মঈন উদ্দিন খানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষ দিকে সিলেট বিভাগে কর্মরত প্রত্যেক কারারক্ষীর ঠিকানা যাচায়েরই জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু হলে মঈন উদ্দিন খানের ঠিকানা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় হতে শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর একটি পত্র পাঠানো হয় এবং মঈন উদ্দিন খান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা কি না এ ব্যাপারে একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রেরণের জন্য বলা হয়।
ADVERTISEMENT
তিনি জানান, পত্র প্রাপ্তির পর শাহাজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একটি প্রত্যয়ন পত্রে উল্লেখ করেন যে উল্লেখিত মঈনকে তিনি চিনেন এবং তিনি কারারক্ষী হিসেবে চাকুরী নয় বরং স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে ওষুধের ব্যবসা করেন। চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানার পর প্রতারক তাজুল গত ২০২১ সালের ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিনের নৈমিত্তিক ছুটিতে যান ও ২০ সেপ্টেম্বরে যোগদান করার কথা থাকলেও তিনি ইতিমধ্যে তার সহকর্মীদের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের তার ভুয়া ঠিকানার ব্যাপারে অবগতির কথা জানতে পারেন। এরপর তিনি পুনরায় চাকুরীতে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ প্রকৃত মঈন উদ্দিন খান বিভাগীয় দপ্তরে চাকুরীতে যোগদানের জন্য একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করেন যেখানে উল্লেখ করেন তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন এবং তার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলেও কোন যোগদান পত্র পান নাই। বিষয়টি প্রতারক জানতে পেরে শাহজাহানপুরে মঈন উদ্দিন খানের দোকানে গিয়ে তাকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয় এবং সত্য ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য বলে। কিন্তু মঈন উদ্দিন খান হুমকির কোন তোয়াক্কা না করে বিষয়টি উন্মোচন করে দিবে বলে জানালে প্রতারক তাজুল মঈন উদ্দিন খানকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রকৃত মঈন উদ্দিন খান তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তীতে তিনি চাকুরী পেতে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
র্যাব-১১ উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা ভুয়া মঈনকে (তাজুল) খুঁজতে থাকলে আত্মগোপনে চলে যান প্রতারক তাজুল। পরে র্যাব গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তাজুলকে সনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত প্রতারককে মামলার তদন্ত পরিচালনাকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।