ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩ : বাড়ি ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা, অথচ তা রক্ষণাবেক্ষণে পেয়াদা, মালি ও নিরাপত্তারক্ষীর জন্য বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাসায় না থাকলেও প্রতিবছর এই টাকা গচ্চা দিতে হয় সংস্থাটিকে। ওয়াসার নীতিমালা অনুযায়ী, বাসায় না থকেলে বরাদ্দ বাতিল হওয়ার কথা। অথচ, ওই বাসায় না থেকেও এক যুগের বেশি আলিসান বাসাটি নিজের নামে রেখেছেন ঢাকা ওয়াসার প্রভাবশালী ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।
ADVERTISEMENT
উজির, নাজির, পায়িক, পেয়াদা— সবই আছে রাজমহলে, অপেক্ষা শুধু রাজার। ১৩ বছরে দু-একবার দেখা গেছে তাকে। তবে তার জন্য মহল প্রস্তুত রাখতে বছরে খরচ হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
বাড়িটার নাম জানলেই আর কোনো ধাঁধা থাকবে না। গুলশান-২ এর ৫৫ নম্বর রোডের এই বাসার নাম ওয়াসা এমডি রেসিডেন্স। খোদ এমডি যে সংস্থাকে বলেন— ভিক্ষায় চলা প্রতিষ্ঠান, সেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের জন্য বাসাটি বরাদ্দ করেছে ওয়াসা।
ADVERTISEMENT
দুই বিঘার ওপর বাড়িটির ভাড়া মোটে ৩৫ হাজার টাকা। অথচ এর পাশেই ওয়াসার কর্মকর্তাদের জন্য ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের বাসার ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এখানেই শেষ না, ৩৫ হাজার টাকার আলিসান ডুপ্লেক্স রক্ষণাবেক্ষণে মালী, নিরাপত্তারক্ষী, কেয়ারটেকার ও পরিচ্ছন্নকর্মীর বেতন বাবদ মাসে গুনতে হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। যে জন্য এত আয়োজন, সেই মানুষটি শেষ কবে এসেছিলেন, তা বলতে পারেন না কেউ।
এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, স্যারের কোনো প্রোগ্রাম থাকলে এখানে আসে। অনেক আগে এখানে থাকত। কিছু দিন ছিলও, তারপর থেকে ওখানেই থাকে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে বরাদ্দের পর কিছুদিন বসবাস করলেও গত এক যুগে দু-একবার বাসাটিতে আসেন তাকসিম। ওয়াসার বাড়ি বরাদ্দ নীতিমালার ৯-এর ‘ক’-তে বলা হয়েছে, বাসায় না থকেলে বরাদ্দ বাতিল হবে। তারপরও কী করে এক যুগ ধরে বাসা বরাদ্দ রাখলেন? বিষয়টি জানতে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে গেলে মূল ফটকেই আটকে দেওয়া হয়।
ADVERTISEMENT
ব্যক্তিগত সহকারী সময় দিলেও কী কারণে এমন ব্যবহার, তা জানতে এমডিকে কয়েকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা অনেক কিছুই করি না এখন। আসলে বোর্ড ঠিকমতো ফাংশন করে না এখন। অনেক ঝামেলা হয়। সেজন্য চুপচাপ থাকাই ভালো। এগুলো তুলে কোনো লাভ নেই। আসলে কিছু করা যায় না। আমি ওয়াসা কীভাবে চলছে, সেসব নিয়েও কোনো কথা বলতে চাই না।
তবে তাকসিমের দুর্নীতি নিয়ে খোলামেলায় কথা বলেন বোর্ডের আরেক সদস্য দ্বীপ আজাদ।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য দ্বীপ আজাদ বলেন, এটা বাস্তবসম্মত না। এ রকম একটি বাড়ি যদি মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় একজনকে ভাড়া দেওয়া হয় বা তার বেতন থেকে কাটা হয়, সেটি অবশ্যই বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জনবল নিয়োগের বিষয়টিও আমরা পর্যালোচনা করব। বাড়িটির ভাড়া যেন বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয় কিংবা তিনি যদি বাড়িটি ব্যবহার না করেন সেক্ষেত্রে এটি কীভাবে ওসার আয়বর্ধনের কাজে লাগানো যায়, সেটিও আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রে বাস করায় বছরের দুই-এক মাস সেখানেই থাকেন তাকসিম। বিদেশে থেকে টানা তিন মাস ভার্চুয়ালি অফিস করার রেকর্ডও আছে তার। জানা যায়, দেশে থাকলে পল্টনে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন ঢাকা ওয়াসার প্রভাবশালী এই কমকর্তা।