মুজিব: একটি জাতির রূপকার | |
---|---|
পরিচালক | শ্যাম বেনেগল |
চিত্রনাট্যকার |
|
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | শান্তনু মৈত্র |
চিত্রগ্রাহক | আকাশদীপ পাণ্ডে |
প্রযোজনা কোম্পানি |
|
দৈর্ঘ্য | ১৮০ মিনিট[১] |
দেশ | বাংলাদেশ ভারত |
ভাষা | বাংলা ইংরেজি হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ৳৮৩ কোটি[২] |
মুজিব: একটি জাতির রূপকার হলো শ্যাম বেনেগল পরিচালিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত একটি বাংলা ভাষার জীবনীসংক্রান্ত চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটিতে আরিফিন শুভ বঙ্গবন্ধু নামে খ্যাত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যাকে ১৯৭৫-এর অভ্যুত্থানের সময় সপরিবারে হত্যা করা হয়।[৩]
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।[৪] এই চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় ৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ মোট অর্থের ৫০ কোটি ও ভারত ৩৩ কোটি টাকা দিয়েছে।[২] আরিফিন শুভ, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও জায়েদ খান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মাত্র ৳১ পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়েছেন।[৫][৬][৭] চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা ১৮ মার্চ ২০২০ তারিখে তথা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর পরের দিন শুরু হওয়ার কথা ছিলো।[৮] কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে চলচ্চিত্রের কাজে দেরি হয়।[৯]
চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্রে কে অভিনয় করবেন তা নিয়ে বাংলাদেশীদের মাঝে প্রচুর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ প্রধান চরিত্রে অমিতাভ বচ্চন, নওয়াজুদ্দীন সিদ্দিকী, বোমান ইরানি, আদিল হুসেইন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারিক আনাম খানের নাম প্রস্তাব করে। অনেক নেটিজেন কিছু অভিনেতাদের ছবি সম্পাদনা করে তাদের চেহারায় বঙ্গবন্ধুর মতো চুল ও গোঁফ বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে।[১০]
শ্যাম বেনেগল জানিয়েছেন যে এই চলচ্চিত্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত, ভারতের বন্ধু হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসাও করেন।[১১] চলচ্চিত্রটির ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিবাচক ছিলেন। শ্যাম বেনেগল পরিচালিত চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তিনি আশা করেন যে এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।[১২]
এর শিল্প নির্দেশক নীতিশ রায়। পিয়া বেনেগল চলচ্চিত্রের পোশাক পরিচালনার দায়িত্বে। দয়াল নিহালনি হলেন এর সহকারী পরিচালক। এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জাইদি।[১৩] এর নির্বাহী প্রযোজক হলো নুজহাত ইয়াসমিন।[২] এর লাইন ডিরেক্টর মোহাম্মদ হোসেন জেমি।[১৪] এর সংলাপ লেখক, তত্ত্বাবধায়ক ও কোচের নাম সাধনা আহমেদ।[১৫] এর কাস্টিং পরিচালক শ্যাম রাওয়াত ও বাহারউদ্দিন খেলন।[১৬][১৭]
কুশীলব
- শেখ মুজিবুর রহমান (ওরফে বঙ্গবন্ধু) চরিত্রে আরিফিন শুভ
- তরুণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রে দিব্য জ্যোতি
- রেনু (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা
- তরুণী রেনু চরিত্রে প্রার্থনা ফারদিন দীঘি
- শেখ হাসিনা চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া
- কিশোরী শেখ হাসিনা চরিত্রে ওয়ানিয়া জারিন আনভিতা (৮ থেকে ১২ বছর)
- এ.কে. ফজলুল হক চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চু
- খন্দকার মোশতাক আহমেদ চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু
- আবদুল হামিদ খান ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ
- তরুণী রেনু (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) চরিত্রে দীঘি
- তাজউদ্দীন আহমদ চরিত্রে রিয়াজ
- আব্দুল হামিদ চরিত্রে গাজী রাকায়েত
- মানিক মিয়া চরিত্রে তুষার খান
- পাকিস্তানি সেনা অফিসারের ভূমিকায় শতাব্দী ওয়াদুদ
- বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে খায়রুল আলম সবুজ (৬৫ থেকে ৯৪ বছর)
- বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী (৪৫ থেকে ৬৫ বছর)
- বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন চরিত্রে দিলারা জামান
- বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন (তরুণী) চরিত্রে সঙ্গীতা চৌধুরী
- হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী চরিত্রে তৌকির আহমেদ
- সৈয়দ নজরুল ইসলাম চরিত্রে দেওয়ান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সায়েম সামাদ
- কামারুজ্জামান চরিত্রে সমু চৌধুরী
- মনসুর আলী চরিত্রে খলিলুর রহমান কাদেরি
- মেজর জেনারেল ওসমানী চরিত্রে খন্দকার হাফিজ
- জেনারেল আইয়ুব খান চরিত্রে মিশা সওদাগর
- শেখ রেহানা চরিত্রে সাবিলা নূর
- কিশোরী শেখ রেহানা চরিত্রে সামান্তা রহমান
- তারেক রহমান চরিত্রে মোঃ ইসমাইল আহমেদ
- শেখ কামাল চরিত্রে কামরুল হাসান
- কিশোর শেখ কামাল চরিত্রে ইশরাক তূর্য (৮ থেকে ১২ বছর)
- শিশু শেখ কামাল চরিত্রে তৌহিদ (৫ বছর)
- কিশোর শেখ কামাল চরিত্রে ইশরাক তূর্য (৮ থেকে ১২ বছর)
- শেখ জামাল চরিত্রে শরীফ সিরাজ
- প্রবীণ নারীর ভূমিকায় রোকেয়া প্রাচী
- শামসুল হক চরিত্রে সিয়াম আহমেদ
- জেলার চরিত্রে আবুল কালাম আজাদ
- সুলতানা কামাল খুকী চরিত্রে নাজিবা বাশার
- জেনারেল টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খান
- মহিউদ্দিন আহমেদ চরিত্রে আশিউল ইসলাম
- খালেদা জিয়া চরিত্রে এলিনা শাম্মী
- তোফায়েল আহমেদ চরিত্রে সাব্বির হোসেন
- পুলিশ চরিত্রে হাসান দ্বীপ
- পুলিশ চরিত্রে সুদীপ সারাঙ্গী
প্রযোজনা
পটভূমি
যদিও বহু লোক বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলো তবে তারা কেউ সফল হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানের অভিনেতা রাজ তাকে নিয়ে ১৯৭০ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন যার নাম ছিলো বঙ্গবন্ধু।[১৮] আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দ্য পোয়েট অফ পলিটিক্স (আক্ষ. ’রাজনীতির কবি’) শিরোনামে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এটা শোনা গিয়েছিলো যে অমিতাভ বচ্চন সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন৷ যাই হোক, চলচ্চিত্রটি আলোর মুখ দেখেনি।[১৯] ২০১০ সালে ভিবজিয়র ফিল্মস হলিউডে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করে। জানা যায় যে চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ ২০১১ সালে শুরু হবে।[২০] এর সাত বছর পরে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার বাবার জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র করার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি তার পছন্দ হয়।[২১] ৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে, শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নতুন দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদী অনুষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্রটির ধারণা ঘোষণা করেন।[২২]
উন্নয়ন
প্রশ্নই ওঠে না। আমি তো কোনও বলিউড ব্লকবাস্টার বানানোর চেষ্টা করছি না–যেমনটা বললাম, আমি বাংলাদেশের ছবি বানাতে চাই, বচ্চনের ছবি নয়। এই বায়োপিকের ফোকাসটা সম্পূর্ণ অন্য জায়গায়, এটা আপনাদের বুঝতে হবে। এখানে একটা জাতির আবেগ, তাদের অনুভূতির প্রশ্ন জড়িত–সেটা তো আমাকে মর্যাদা দিতেই হবে, তাই না?
—চলচ্চিত্রের জন্য প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে শ্যাম বেনেগল[২৩]
২৭ আগস্ট ২০১৭-এ ভারতের রাজধানীতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার মধ্যকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি ছিলো বঙ্গবন্ধুর উপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করা।[২৪] ১৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে যে চলচ্চিত্র সম্পৃক্ত প্রাথমিক কর্মকান্ড সেই বছর থেকে শুরু হবে।[১৯] পরিচালনার জন্য ভারত থেকে তিনজন পরিচারলকের নাম প্রস্তাব করা হলে চলচ্চিত্র কমিটি শ্যাম বেনেগলকে বাছাই করে।[ক][২৬] শ্যাম বেনেগল চলচ্চিত্রটি পরিচালনার কাজের প্রস্তাব গ্রহণ করেন কেননা তার মনে হয়েছিলো যে চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রটি ছিলো তার সময়ের একটি আকর্ষণীয় ব্যক্তি।[২১] পরবর্তীতে ১৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে আরেকটি চলচ্চিত্র সংক্রান্ত চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করা হয়।[২৭] শ্যাম বেনেগল এছাড়াও বলেন যে এটি একটি বাঙালী জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র।[২৩] শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন যে চলচ্চিত্রটির ভাষা হোক ইংরেজি বা হিন্দুস্তানি কিংবা উর্দু ভাষা। কিন্তু শ্যাম বেনেগল চলচ্চিত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা তথা বাংলায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।[খ][২৮] বেনেগল বাংলা ভাষা না জানায় তাকে অনুবাদকদের সাহায্য নিতে হয়েছে।[২৯] দুই বছর পরে এর অফিশিয়াল নাম ঘোষণা করা হয়।[৩০] পরিচালক চলচ্চিত্রের জন্য এই নাম দেন মুজিব নামটির তাৎপর্যপূর্ণতার কারণে।[২৮]
রচনা
চলচ্চিত্রের গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে অতুল তিওয়ারি ২০১৯ সালের মে মাসে বাংলাদেশে ভ্রমণ করেন। পিপলু খান ছিলেন তার সাহায্যকারী ও গবেষণা সংক্রান্ত সহকারী।[১] গবেষণার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা পরিচালককে তার বাবার জীবন সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রের কাহিনী পর্যালোচনা করলেও তিনি এর মধ্যে কোন বড় পরিবর্তন করেননি।[২১] চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ করার জন্য শামা জাইদি ও অতুল তিওয়ারি চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র সম্পর্কে গওহর রিজভীর গবেষণাপত্রের সাহায্য নেন। গবেষণার অংশ হিসেবে লেখকেরা বঙ্গবন্ধুর সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। চলচ্চিত্রের সংলাপের জন্য একটি সংলাপ লেখক কমিটি গঠন করা হয়। অনম বিশ্বাস, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, শিহাব শাহীন ও সাধনা আহমেদকে কমিটির সদস্য হিসেবে বাছাই করা হয়। কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে আসাদুজ্জামান নূর সদস্যদের সাহায্য করেন।[১৫]
অভিনয়শিল্পী
শ্যাম বেনেগল এটা নিশ্চিত করেছিলেন যেন চলচ্চিত্রের অধিকাংশ অভিনয়শিল্পী যেন বাংলাদেশের হয়।[২৩][গ] চরিত্র বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতে[ঘ] ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অডিশনের ব্যবস্থা করা হয়। অনেক বাংলাদেশী অভিনয়শিল্পীদের পাশাপাশি অডিশনে সৌম্য জ্যোতি, তারিক আনাম খান, শামীমা নাজনীন ও জয়া আহসানও উপস্থিত ছিলেন।[১৭][৩১] চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীদের একটি খসড়া তালিকা ৪ মার্চ ২০২০-এ তৈরি করা হয়।[৩২][ঙ] আরিফিন শুভ ছিলেন বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য বাছাইকৃত ১৫ অভিনয়শিল্পীদের একজন যাকে ৫ বার অডিশনের পর চূড়ান্ত করা হয়।[১৬] একটি সাক্ষাৎকারে কেন আরিফিন শুভকে প্রধান চরিত্রে নেওয়া হলো তার উত্তরে পরিচালক হলেন যে সে এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি ছিলো।[২৩] জ্যোতিকা জ্যোতি ও হিমিকে যথাক্রমে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ হাসিনা চরিত্রে বাছাইপর্বে ঠিক করা হলেও তাদের পরবর্তীতে বাদ দেওয়া হয়।[৩৩][৩৪] রওনক হাসানকে শেখ কামাল চরিত্রের জন্য বাছাই করা হয়েছিলো, তাকেও পরে বাদ দেওয়া হয়।[৩৫] ফেরদৌস আহমেদকে তাজউদ্দীন আহমদ চরিত্রে চূড়ান্ত করা হলেও ভিসা সংক্রান্ত কারণে[৩৬] তার বদলে রিয়াজকে নেওয়া হয়।[৩৭]
চিত্রগ্রহণ
চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণের প্রকৃত তারিখ হিসেবে নভেম্বর ২০১৯ নির্ধারণ করা হয়েছিলো।[১] পরবর্তীতে তারিখটি ১৭ মার্চ ২০২০-এ পেছানো হলেও তা স্থগিত করা হয়।[৯] বঙ্গবন্ধু: একটি জাতির রূপকার কাজের শিরোনামে এর চিত্রগ্রহণ[৩০] ভারতে ২১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে শুরু হয়।[চ] চিত্রগ্রহণের প্রথম ধাপ দেশটিতে ১০০ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করা হয়। এটা জানানো হয় যে স্বাধীনতা যুদ্ধের দৃশ্যগুলো দ্বিতীয় ধাপে করা হবে।[২৭] কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের কাজ একাধিকবার স্থগিত করা হয়েছিলো।[৩৯] ২০ নভেম্বর থেকে চলচ্চিত্রের বেশ কিছু দৃশ্য বাংলাদেশের কিছু জায়গাতেও ধারণ করা হয়।[ছ] চিত্রগ্রহণের দ্বিতীয় ধাপ ৫৯ দিন পর শেষ হয়।[৪৩] এপ্রিল ২০২২ অনুযায়ী খসড়া হিসেবে ৯৬০ মিনিট দৃশ্যধারণ করা হয় বলে জানা গেছে।[৪৪]
সঙ্গীত
২০২১ সালে প্রযোজনা দল জাহিদ আকবরের সাথে যোগাযোগ করে তাকে চলচ্চিত্রটির একমাত্র গানের কথা লিখে দিতে বলে। গানটির নাম দেওয়া হয় অচিন মাঝি যার সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী ছিলেন শান্তনু মৈত্র, যিনি চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালক। এটি তার চলচ্চিত্রে গাওয়া প্রথম গান।[৪৫][৪৬]
প্রচারণা
এর প্রথম পোস্টারটি ১৭ মার্চ ২০২২ তারিখে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে উন্মুক্ত করা হয়।[৩০] দ্বিতীয় পোস্টারটি ৪৭ দিন পরে প্রকাশ করা হয়।[৪৭] এর ট্রেলার ১৯ মে ২০২২ তারিখে প্রকাশিত হয়। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত প্যাভিলিয়নে ট্রেলারটি প্রদর্শনের পর সেটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়।[৪৮] প্যাভিলিয়নের দর্শকরা চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করেন।[৪৯]
বিতর্ক
পরিচালক
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে তিনজন ভারতীয় পরিচালকের নাম প্রস্তাব করার খবরটি বাংলাদেশীদের অখুশি করে।[২৯] বাংলাদেশের কিছু বিখ্যাত পরিচালক এই কাজের সমালোচনা করেন। সমালোচকদের মধ্যে ছিলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মাহমুদ দিদার ও খিজির হায়াত। আবুল হায়াত ও তৌকির আহমেদ এই ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। যাই হোক, এই অসন্তুষ্টির জবাবে গৌতম ঘোষ ইঙ্গিত করেন ভারতীয় জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর চলচ্চিত্র একজন বিদেশী বানিয়েছিলেন। অন্যদিকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন যে এটা কোন বড় ব্যাপার নয় কেননা বঙ্গবন্ধু হলেন কাজী নজরুল ইসলামের মতই একজন যিনি ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই সম্পদ।[জ][২৫]
ট্রেলার
মুজিব – একটি জাতি গঠন |
চলচ্চিত্রের ট্রেলার আপলোড হওয়ার পর এটি জনসাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।[৫০] বিভিন্ন সমস্যার জন্য ট্রেলারটি সমালোচিত হয়। চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল ট্রেলারটির সমালোচনা করেন। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেন যে এই বিষয়টা সাধারণ কেননা এমনকি গান্ধী ও জিন্নাহ চলচ্চিত্র দুটিও সমালোচনা থেকে বাঁচতে পারেনি।[৩৬] ট্রেলারের সমালোচনার বিপরীতে পরিচালক শ্যাম বেনেগল বলেন যে পুরো চলচ্চিত্র না দেখে শুধুমাত্র ট্রেলার দেখে প্রতিক্রিয়া দেখানো অনুচিত।[৫১] সোহানুর রহমান সোহান তার কথাকে সমর্থন জানান।[৫২] দর্শকদের একটা অংশ অভিযোগ করে যে ট্রেলারটিতে অনেক ঐতিহাসিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। চলচ্চিত্রের সংলাপ লেখিকা সাধনা আহমেদ সেসব অভিযোগের যুক্তিখণ্ডন করে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকাকে বলেন যে এই চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক ভুল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।[১৫]
বাংলাদেশের মানুষ মুজিব চলচ্চিত্রের ট্রেলারের সমালোচনা করায় আরিফিন শুভ বলেন যে এটি অফিশিয়াল ট্রেলার নয়, যদিও দেশটির তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ২৫ মে তারিখে ট্রেলারটি যে অফিশিয়াল তা নিশ্চিত করেন।[৫৩] ২৬ মে তারিখে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানান যে চলচ্চিত্রের প্রযোজনা সম্পন্ন হওয়ার আগে ট্রেলারটি বানানো হয়েছে এবং পরে নতুন একটা ট্রেলার প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও তিনি এটা পরিষ্কার করে দেন যে এই ট্রেলারটিকে তিনি ট্রেলার বলার বদলে টিজার বলতেই বেশি আগ্রহী। তিনি পরোক্ষভাবে ট্রেলারের ভুল স্বীকার করে নেন।[৫৪]
মুক্তি
বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি ইংরেজি ও হিন্দি দুই ভাষাতে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।[৫৫] এর প্রাথমিক মুক্তির তারিখ ছিলো ১৭ মার্চ, ২০২০।[১] পরে এর মুক্তির নতুন তারিখ হিসেবে ১৭ মার্চ, ২০২২ নির্ধারণ করা হয়।[৪২] ৩ মার্চ ২০২২ তারিখে ঘোষণা দেওয়া হয় যে চলচ্চিত্রটি একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি দেওয়া হবে।