ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নীলফামারী প্রতিনিধি,শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ : সৈয়দপুরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্রিটিশ আমলে তৈরি জলাধারের (ওয়াটার রিজার্ভার) বেশিরভাগই দখল হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন।
দখলদাররা বলছে, খালি জায়গা ভাগাড়, মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। তাই দখল করে কাজে লাগিয়েছি।
সৈয়দপুরে রেলওয়ের ৭৯৮ দশমিক ৯ একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ১১০ একর জায়গাজুড়ে ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠে সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা। অবশিষ্ট জায়গায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলো, সাব-বাংলো ও স্টাফ কোয়ার্টার। এ ছাড়া বসবাসকারীদের অগ্নি নিরাপত্তায় ৫৩ শতক জমির ওপর ২২টি জলাধার তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি দখল হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দখল হওয়া জলাধারে পাকা বাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেকেই করছেন মাছ চাষ। কয়েকটি জলাধার ভরাট করে যাতায়াতের রাস্তা করা হয়েছে। দখলদারদের বিষয়ে এলাকাবাসী রেল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা এসে স্থাপনা ভেঙে দেয়। কিছুদিন পরই রাতারাতি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।
অফিসার্স কলোনির ৫ নম্বর বাংলোর সামনের জলাধারটি এলাকাবাসী ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করত। এটি দখলে নিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর ভাষ্য, রেলের জায়গায় অনেকেই বিশাল ভবন তৈরি করেছেন। যে জায়গায় মানুষ আবর্জনা ফেলত, তার সামান্য অংশ দখলে নিয়েছি। এটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না।
একইভাবে মুন্সিপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন এলাকার জলাধারে দুই তলা বাড়ি করে বসবাস করছেন ব্যবসায়ী মো. আতিক ও তাঁর ছোট ভাই আনিসুর রহমান। দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেলের ২৫.৭৫ একর ফাঁকা জায়গার মধ্যে কিছু অংশ পৌরসভার কাছে বরাদ্দের জন্য আবেদন করি। মিস্ত্রিপাড়ায় জলাধারে মাছ চাষ করছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহির উদ্দিন। তাঁর ভাষ্য, জলাধারের ময়লা ও দুর্গন্ধে থাকাই যাচ্ছিল না। রাতে মাদকসেবীরা আসর বসাত। তাই টিন দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করেছেন। একই এলাকায় ২০ বছর আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন আব্দুল মতিন। সাহেবপাড়া এলাকায় দুটি জলাধার ভরাট করে যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, রমজান আলী ও খয়রাত হোসেন বলেন, সম্প্রতি রেলওয়ে কোয়ার্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সময়মতো পানি না পাওয়ায় ১০টি কোয়ার্টার পুড়ে যায়। অথচ পাশেই ছিল একটি ওয়াটার রিজার্ভার (জলাধার)। কিন্তু জলাধারটি চারপাশ ঘিরে দরজায় তালাবদ্ধ করে রাখায় আগুন নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কাজে আসেনি।
রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (ইনচার্জ) আহসান উদ্দিন জানান, সৈয়দপুরে দখল হওয়া রেলওয়ে জলাধারগুলোর তালিকা করা হয়েছে। এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে জলাধারে বহুতল ভবন নির্মাণকারী মো. আতিকের বাড়ির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁর ছোট ভাই আনিছুর রহমানকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের ফিল্ড কানুনগো কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, ‘রেলওয়ের জলাধারগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই স্থানীয় রেলওয়ে মাঠে বিষয়টি নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হবে।