ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ : বাবার হাত ধরে অপারেশন করাতে কুড়িগ্রাম এসেছিলো পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু মাইশা। অথচ লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। শিশুটি মৃত্যুর পর মরদেহ বাড়িতে নেয়া হলে পেটে মেলে ২০টি সেলাই।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) হাসপাতালসহ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে ঢাকায় এসেছেন মাইশার বাবা ও তার ভাই।
মাইশার বাবা মোজাফফর জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের খরচ বাবদ নেয়া টাকা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। মরদেহ বাড়িতে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করে দেয়। কিন্তু পথে কয়েকবার চালক পরিবর্তন হয়, গ্যাসের সমস্যার কথা বলে বগুড়ায় নামিয়ে দেয়। পরে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নেয়া হয় মাইশার মরদেহ। দাফনের জন্য গোসল করাতে গিয়ে নারীরা দেখতে পান, শিশু মাইশার নাভির নিচে পুরো পেটে সেলাই করা। পরে তারা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু ঢাকায় অপারেশন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ চলে যায়। পরে নিরুপায় হয়ে মাইশাকে দাফন করা হয় বাড়ির আঙিনায়।
মোজাফফর আলী বলেন, মেয়ের হাতের আঙুল ঠিক করার জন্য ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীবের কাছে যাই। তিনি সবকিছু দেখে বলেন বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে অপারেশন করা হবে। রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল মেডিকেলে তার শেয়ার আছে জানিয়ে ডাক্তার বলেন, সেখানে অপারেশন করালে খরচ কম লাগবে। বুধবার সেখানে হাতের অপারেশন করার সময় মেয়ে মারা যায়। পরে তারা আমাদের টাকা ফেরত দেয় এবং ধমক দিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি এসে মেয়েকে গোসল করার সময় স্থানীয় মহিলারা দেখেন, মেয়ের তলপেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা।
মোজাফফর আরও বলেন, আমরা এটা দেখে নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি নাই। হাত অপারেশন করতে গিয়ে তারা কেন আমার মেয়ের পেট কাটল তা জানি না। আমাদেরকে কোনো কাগজপত্রও দেয়া হয় নাই।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত চিকিৎসক মো. আহসান হাবীব বিসিএস ২৫ ব্যাচের চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় অপর চিকিৎসক হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম। তার নিবন্ধন নম্বর জানা যায়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করে ওই স্থানে ত্বক যুক্ত করার জন্য পেট থেকে ত্বক নেয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে। পরিণত বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে ঊরু থেকে ত্বক নেয়া হয়। অ্যানেসথেসিয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।