ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ .কম (টিভি),স্বাস্থ্য প্রতিনিধি,বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২ : হার্টের রিং পরানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এবং এ সেবাকে আরও বেগবান করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’ পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে হার্টের রিং লাগানোর সর্বাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও শুরু হতে যাচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সর্বাধুনিক ‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’ চিকিৎসা। হার্টের চিকিৎসার এ নবসূচনা রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’ চিকিৎসা বিষয়ে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে চ্যানেল24 অনলাইনের বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: সহজ করে বললে রোবটের মাধ্যমে রোগীর হার্টে রিং পরানোকে ‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’ বলে। চিকিৎসকরা সাধারণত নিজেরা সামনে দাঁড়িয়ে রোগীদের রিং পরিয়ে থাকে। কিন্তু ‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’র দু’টি অংশ থাকে। একটি হলো রোবটের একটি হাত, যেটি ক্যাথল্যাবে থাকে। আরেকটি কন্ট্রোল সেকশন থাকে। সেখান থেকেই মূল কাজ সম্পাদন করা হয়। একজন কার্ডিওলজিস্ট পুরো কার্যক্রমটি সে জায়গায় বসে অপারেট করেন।
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: প্রথমত ‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’ দিয়ে হার্টে রিং বসানো গেলে অবস্থান অত্যন্ত নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা যায়। ফলে রোগী অনেক ঝুঁকিমুক্ত থাকে। সময় অনেক কম লাগে।
এছাড়া রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে চিকিৎসক যেকোনো জায়গা থেকে হার্টে রিং বসাতে পারবেন। চিকিৎসক চাইলেই অফিস, বাসা বা দেশের বাইরে থেকে ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে একজন রোগীকে এ চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন বা অপারেট করতে পারবেন। এতে সময় এবং শ্রম দুটোই সাশ্রয় হবে।
আরও একটি বিশেষত্ব হলো রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করলে বেশ কিছু সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন একজন চিকিৎসক। যেমন, যেসব চিকিৎসক সাধারণ এনজিওপ্লাস্টি করে থাকেন তারা বেশ কিছু সমস্যায় পড়েন। এনজিওপ্লাস্টি করার সময় যন্ত্র থেকে অনেক রেডিয়েশন বের হয়। ফলে চিকিৎসকদের ব্রেইন ক্যানসার এবং চোখের জ্যোতিও কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া চিকিৎসকরা যখন ক্যাথল্যাবে কাজ করেন, রেডিয়েশন দূর করার জন্য তাদের প্রায় ১৫ পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ জামা পরে থাকতে হয়। ফলে ঘাড়ের নার্ভে চাপ পড়ে। পরবর্তীতে ওই চিকিৎসক খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এনজিওপ্লাস্টি করতে পারেন না।
চ্যানেল24 অনলাইন: আপনি কোথায় এ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন?
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: সম্প্রতি ভারতের হায়দরাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সেখানকার প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. পি সি রাথের কাছ থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে সর্বশেষ আমি নিজের হাতে এনজিওপ্লাস্টি করেছি।
চ্যানেল24 অনলাইন: দেশের মানুষ কবে থেকে এ চিকিৎসা সেবা পাবে?
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব যন্ত্রপাতি আনা যায় এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। আশা করছি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আমাদের হাসপাতালের মাধ্যমে এ আধুনিক চিকিৎসার সূচনা হবে।
চ্যানেল24 অনলাইন: এ চিকিৎসা সেবা পেতে কত টাকা খরচ হবে?
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: এ চিকিৎসায় নামমাত্র খরচ বহন করতে হবে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল হার্টের চিকিৎসায় রিং বিনামূল্যে প্রদান করে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি এনজিওপ্লাস্টির সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে তাহলে আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ‘রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি’ করতে পারব।
চ্যানেল24 অনলাইন: দেশের বাইরে এ চিকিৎসার খরচ কেমন?
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: এ রোগের চিকিৎসায় আমাদের দেশের বেশিরভাগ রোগী ভারত ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যায়। ভারতে এ চিকিৎসা নিতে গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো খরচ পড়বে। এছাড়া সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন উন্নত বিশ্বে এ চিকিৎসায় আরও বেশি খরচ বহন করতে হয়।
চ্যানেল24 অনলাইন: রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি চিকিৎসা পদ্ধতির যাত্রা কবে থেকে?
ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার: এই চিকিৎসা পদ্ধতির যাত্রা মাত্র তিন বছর আগে। ২০১৯ সাল থেকে এ সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ১৬০টি সেন্টারে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।
হার্টের রোগীর পরিসংখ্যান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতি বছর হৃদরোগে অন্তত ১ কোটি ৭৯ লাখ লোক মারা যায়। এর ৮০ শতাংশই মারা যায় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে।