ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০২২ : প্রথমে অপহরণ, পরে মুক্তিপণের জন্য চলে রাতভর নির্যাতন। টাকা দিয়েও মুক্তি মেলেনি, যেতে হয় কারাগারে। ভুয়া মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তিকে জেল খাটাতে এমনই ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়েছে পুলিশের তিন সদস্য।
ক্ষুব্ধ আদালত অভিযুক্ত তিন পুলিশসহ ছয়জনকে রিমান্ড দিয়েছেন। এর আগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে রক্ষকের ভক্ষকে পরিণত হওয়ার এই লোমহর্ষক ঘটনা।
গেল পয়লা নভেম্বর ব্যবসায়ী মাহবুব আলম খানকে ধানমন্ডি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয় একদল লোক। সেদিনের ঘটনাই বলছিলেন ত
মাহবুব বলেন, আমি যে কী মার খেয়েছি। আমার গলায় দুই পা রেখে মারধর করেন তারা। তখন ওই এলাকার লোকজন প্রশ্ন করেন, আপনারা কারা? তাকে মারছেন কেন? জবাবে ওরা সিআইডির কার্ড বের করেন।
রাতভর নির্যাতন করে আদায় করা হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। তিনি জানান, তাকে দিয়েই তা উঠিয়েছেন তারা।
সন্দেহ হওয়ায় টাকা তোলার এই দৃশ্যধারণ করে রাখেন দোকানি। দুপুরের দিকে তাকে পাঠানো হয় আদালতে। গ্রেপ্তার দেখানো হয় বিশেষ ক্ষমতা আইনের এক মামলায়। আর পুরো এই ঘটনা ধরা পড়ে আদালত চত্ত্বরের সিসি ক্যামেরায়।
৫ দিন জেল খেটে বেরিয়ে মাহবুব বুঝতে পারেন, ভুয়া মামলায়, ভুয়া আসামি সাজিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মাহবুব বলেন, আমি জানি আমাকে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তবে কোন মামলায় দেয়া তা জানি না।
আসামিকে আদালতে পাঠানোর ফরোয়ার্ডিং লেটার দেখে সিআইডির মুখোমুখি চ্যানেল টোয়েন্টিফোর।
বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচ উদ্দিন বলেন, আসামি চালানের ভুয়া ফরোয়ার্ডিং এবং ভুয়া চালান-এ দুটি কাগজ তারা তৈরি করেছেন। কোর্টে শেষ মুহূর্তে তা সোপর্দ করেন তারা। ওই সময় চেঞ্জওভারের একটা ব্যাপার থাকে। তাড়াহুড়োর ব্যাপার থাকে। সেই সুযোগটাই নিয়েছেন তারা।
জালিয়াতির বিষয়টি টের পেয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন পাঠায় সিআইডি। এ ঘটনাকে আইন ও বিচার ব্যবস্থার জন্য হুমকি উল্লেখ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা করার নির্দেশ দেন আদালত।
তবে ইতোমধ্যে ধানমন্ডি মডেল থানায় মামলা করেছেন মাহবুব। এই মামলায় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত নাজমুল, সিআইডির কন্সটেবল মুন্সি আবদুর রহমান এবং ড্রাইভার শেখ ফরিদসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, কেউ বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। কেউ বলেন অন্যরা তুলে নিয়ে গেছে। আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করলে প্রথমে আমিন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করি। তার কথামতো জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করি। পরে আমরা জানতে পারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েও তিনজন ব্যক্তি ছিল। সেটাও আমরা খুঁজে বের করেছি।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ প্রধানও। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলা যখন নিয়েছি, তখন কোনো ছাড় নয়। এক্ষেত্রে কোনো খাতির নেই।
অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের এ ঘটনার সহযোগিদের ধরতে অভিযান অব্যহত রেখেছে গোয়েন্দা পুলিশ।