ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,রোববার , ২৮ আগস্ট ২০২২ : ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমা। এর মুক্তি উপলক্ষে গত ১১ আগস্ট ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়ার ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন সিনেমার প্রযোজক তাহেরা জেনিফার ফেরদৌস। প্রযোজক ও শিল্পী-পরিচালকের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিন সপ্তাহ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর নানা নাটকীয়তার পর সিনেমা মুক্তির আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রাতে বিএফডিসিতে দ্বন্দ্বের অবসান হয়। আর এতে সহযেযাগিতা করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্রের অন্যান্য সংগঠন।
দ্বন্দ্বের অবসানের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজক জেনিফার বলেন, “আমি অনেক সময় ওকে (মাহিয়া মাহি) তীক্ততার সঙ্গে অনেক কিছু বলে ফেলেছি, যা ঠিক হয়নি। ওর একটা সংসার রয়েছে। তো আমাদের দু’জনের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল তা সমাধান হলো। ওর (মাহিয়া মাহি) কথাও সত্য নয়। ওর কথা যদি সত্য না হয় তাহলে আমার কথাও সত্য নয়। তাই না, সেটাই হওয়া উচিত।”
সিনেমা মুক্তির আগের দিন দ্বন্দ্বের অবসান ও প্রযোজকের এই মন্তব্য নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠে। তাহলে কি সিনেমার নেতিবাচক প্রচারণা ছিল? গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার জন্য অভিনব এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ? আর গণমাধ্যমে কেনই বা বারবার প্রযোজক-শিল্পী ভুল তথ্য দিয়েছেন?
সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রশ্নগুলো করতে চাওয়া হলেও সমাপ্তি করা হয় সংবাদ সম্মেলনের। যে কারণে অজানা থেকে যায় অনেক প্রশ্নের উত্তর। শনিবার (২৭ আগস্ট) এসব বিষয়ে প্রযোজক জেনিফারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘চ্যানেল 24 অনলাইন’কে তিনি বলেন, “এখন তো এককভাবে বলার কিছু নেই। সবই আপনাদের সামনে।”
দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। প্রচারে সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা রোশান ও মাহি অংশ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে জেনিফার ফেরদৌস বলেন, “বৃহস্পতিবার আমাদের দ্বন্দ্বের সমাধান হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই, নিপুণ আক্তার সমাধান করে দিলেন। আমাদের সঙ্গে সবারই মেলবন্ধন হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) সিনেমার প্রচারণায় ওদের অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আমি যেটা জানি মাহি অসুস্থ ছিল এবং রোশানের আসার কথা থাকলেও কোনো একটা কাজে ফেসে যাওয়ায় আসতে পারেনি। আর আজ আমি সৈনিক ক্লাবে যাচ্ছি, তবে ওরা আসবে কিনা আমি জানি না।”
সিনেমার প্রচারণার জন্য নাটকীয় দ্বন্দ্ব কিংবা নেতিবাচক প্রচারণার কৌশল ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কখনোই না। এটা নেতিবাচক বা ইতিবাচক কোনো কৌশলই ছিল না। এটা আমাদের মাঝে বোঝাবুঝির একটা সমস্যা ছিল, সেটাও সমাধান করে দিয়েছেন সিনিয়ররা।”
এসব বিষয়ে রোশান ও মাহির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি তাদের।
এদিকে ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার দ্বন্দ্ব ও প্রচারণার ব্যাপারে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বলেন, এটা যদি তাদের নেতিবাচক প্রচারণার কোনো অংশ হয় তাহলে মোটেও ঠিক হয়নি। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, ছোট ছোট বিষয়ে অভিযোগ তোলা উচিত হয়নি কারো। যদি প্রচারণা করতেই হয় তাহলে সিনেমার কোনো একটা অংশ নিয়ে করা যেত। তারা কিন্তু সেটা করেনি। আর যদি তাদের মধ্যকার প্রকৃতই কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তবে তা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কিংবা বাকযুদ্ধ না করে শুরুতেই সমাধান করা যেত। এতে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকের মাঝে শুধু ভুল বোঝাবুঝিই নয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়লো সিনেমার ক্ষেত্রে।
এর আগে গত ১১ আগস্ট ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা চিত্রনায়ক রোশান ও চিত্রনায়িকা মাহির ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন সিনেমার প্রযোজক তাহেরা জেনিফার ফেরদৌস। সিনেমার প্রচারণায় রোশান ও মাহি অংশ নিচ্ছেন না উল্লেখ করে প্রযোজক বলেন, তারা (রোশান-মাহি) সিনেমার পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার করেনি।
জেনিফার ফেরদৌস ক্ষোভ থেকে সেই সময় বলেন, নায়ক-নায়িকাকে পারিশ্রমিক দিয়ে সিনেমায় নিয়ে থাকেন প্রযোজক। এখন তারা যদি শেয়ার না দেয়, সে কারণে যদি সিনেমা না চলে, তাহলে তো কিছু বলার নেই। তাছাড়া নায়ক-নায়িকা যখন নিজের সিনেমার প্রচার করে না তখন তো আর আমরা জোর করে করাতে পারি না। নিজের সিনেমার ভালো না বুঝলে আমাদের কিছু করার নেই। সিনেমার প্রচার না করলে একসময় মাইনাস হয়ে যাবে তারা।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে রোশান ও মাহির ব্যাপক সমালোচনা করে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও তুলেন জেনিফার ফেরদৌস। সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে প্রযোজকের অভিযোগের বিষয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় নানা মাধ্যমে। চার-পাঁচ দিন নীরব থাকার পর গত ১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মাহি। সেখানে তিনি প্রযোজক জেনিফার অভিযোগের জবাব দিয়ে পাল্টা কিছু অভিযোগ তুলেন তার বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে সিনেমারর মুক্তির দিনক্ষণ ১৯ আগস্ট থেকে পিছিয়ে ২৬ আগস্ট করা হয়। সেই সঙ্গে প্রযোজক ও সিনেমার শিল্পী-পরিচালকের মধ্যকার বাকযুদ্ধ চলতেই থাকে। আর প্রযোজক জেনিফার মন্তব্যে অনেকটা ক্ষীপ্ত হয়েই তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেন মাহি। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সমাধানের জন্য অভিভাবক হিসেবে বেছে নেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে। গত ২৩ আগস্ট সংগঠনটিতে প্রযোজকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন অভিনেত্রী মাহি।
মাহি অভিযোগপত্র জমা দিয়ে বলেন, “আমার মুখের ভাষা আমার ফ্যামিলিকে রিপ্রেজেন্ট করে। যখন সর্বোচ্চ বাজে ভাষায় আমাকে নিয়ে কথা বলছে সে, তখন মনে হলো তার নামে মানহানির মামলা করব। তখন বিষয়টি নিয়ে আমার অভিভাবক শিল্পী সমিতির সঙ্গে কথা বলি। সংগঠন আমাকে জানালো এখনই যেন মামলা না করি। নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”
একই দিন বিকেলে বিএফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করেন জেনিফার ফেরদৌস। সেখানে তিনি বলেন, “আমি দু’দিন আগেই মামলা করতাম। কেননা, আমার যে ক্ষতি হয়েছে! ত্রিশটির বেশি হল। তিন দিন আগে আমাকে ফোন করেছে, এখন ১৫টা তো দূরে থাক, আমি ৯-১০টা হলও পাচ্ছি না। এই ক্ষতিপূরণ পরিচালক, মাহি ও রোশানকে দিতে হবে। আর আমি অবশ্যই মামলা করব। এটা সরকারি অনুদানের সিনেমা, কোনো ছেলেখেলা না। এটা ব্যক্তিগত কোনো ব্যবসার টাকায় তৈরি হয়নি যে, তারা ফাজলামো করবে। এই অনুদানের টাকা আমি সরকারকে তুলে দেখাব। এই টাকা পরিচালক মানিক, মাহি ও রোশানের কাছ থেকে আসবে। এতবড় ধৃষ্টতা!”
তবে সবশেষ সিনেমা মুক্তির আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রাতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগিতায় ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার প্রযোজক ও কলাকুশলীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান হয়।
https://youtu.be/foXqaqYSJ9M