চট্টগ্রাম: যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কখন ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে, চট্টগ্রামের আপামর মানুষের এটাই এখন একমাত্র প্রশ্ন। গ্রামের বাজারে, মাঠেঘাটে, শহরের চায়ের স্টলে এখন প্রশ্ন শুধু একটাই। সাকা’র ফাঁসি হলে চট্টগ্রাম কলঙ্কমুক্ত হবে, এই জনপদকে আর ‘স্বাধীনতাবিরোধীর এলাকার’ অপবাদ বয়ে বেড়াতে হবেনা, এই কলঙ্কমুক্তির প্রতীক্ষায় আছেন চট্টগ্রামবাসী।
তবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরে সময়ক্ষেপণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা। একইসঙ্গে তারা ফাঁসির পর সাকা চৌধুরীর লাশ যেন চট্টগ্রামে না আসে, সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
শহীদ জায়া বেগম মুশতারি শফি বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিচার অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত হয়েছে। বিচারের সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও তাদের ফাঁসি না দিয়ে কেন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সেটা বুঝতে পারছিনা। এদের মৃত্যুদণ্ড আরও আগেই হওয়া উচিৎ ছিল। আমি চাই, আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে তাদের যেন ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তাদের লাশ বাংলার মাটিতে দাফনের কোন সুযোগ নেই। লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হোক অথবা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হোক। বাংলার মাটিতে যেন তাদের কবর না হয়, সেই দাবি আমি জানাচ্ছি।
‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটা বিদেশি সংস্থা নাকি মৃত্যুদণ্ড না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের এটা বলা উচিৎ হয়নি। তারা মুজাহিদ এবং সালাহউদ্দিনের অপরাধ অনুধাবন না করেই বিবৃতি দিচ্ছে। তাদের কথা আমলে নেয়ার দরকার নেই। ’ বলেন মুশতারি শফি।
বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি, বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্মভূমি চট্টগ্রামে ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর লাশ যেন আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন।
তিনি বলেন, লাদেনকে হত্যার পর তার লাশ কোথায় ফেলা হয়েছে কেউ জানেনা। কারণ লাদেনের কবর দেখে আরও লক্ষ লক্ষ সন্ত্রাসীর জন্ম হত। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী শুধু একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীই নয়, লাদেনের মত ভয়ংকর সন্ত্রাসীও। সালাহউদ্দিনের কবর থেকে যেন আর কোন সন্ত্রাসী, দেশদ্রোহী মানুষের জন্ম চট্টগ্রামে না হয় সেজন্য এখানে তাকে কবর দেয়া যাবেনা। চট্টগ্রাম থেকে আউলিয়ার জন্ম হবে, বিপ্লবীর জন্ম হবে, সন্ত্রাসীর জন্ম যেন আর না হয়।
‘আমরা চট্টগ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতাবিরোধীর জন্মস্থানের অপবাদ বয়ে বেড়াচ্ছি। এই কলঙ্ক থেকে আমরা মুক্তি চাই। আর সময় নষ্ট না করে সালাহউদ্দিন কাদেরকে ফাঁসি দেয়া হোক। চট্টগ্রাম কলঙ্কমুক্ত হোক। ’ বলেন সাহাবউদ্দিন।
গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা.চন্দন দাশ বলেন, সাকার রায়কে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার, তামাশা করা হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র-তামাশা এখনও চলছে। সালাহউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি হয়ে গেলেই সেই ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে। তাই সরকারের উচিৎ অবিলম্বে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা। একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী হলেও বিচার প্রক্রিয়ায় সে আদালতের কাছ থেকে তার প্রাপ্য ন্যায্য সব ধরনের সুযোগ পেয়েছে। তাকে আর কোন সুযোগ দেয়া উচিৎ হবেনা।
গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রতারণার মাধ্যমে আদালতকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। তার পরিবারও সময়ক্ষেপণের জন্য প্রতারণা আর ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছেন। কারাগারে দেখা করার আর সুযোগ নেই জেনেও আইনজীবীরা বারবার আবেদন জানাচ্ছেন। তার ছেলে দেখা করতে চেয়ে সময় নষ্ট করছে। এগুলো শুধুমাত্র সময়ক্ষেপণের কৌশল। সরকারের উচিৎ হবে এই কৌশলে পা না দিয়ে দ্রুত রায় কার্যকর করা। সাকা’র ফাঁসি হলে চট্টগ্রাম কলঙ্কমুক্ত হবে, দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব বেদারুল ইসলাম বেদার বলেন, সারা দেশের মানুষের মত চট্টগ্রামবাসীও সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করছে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর চট্টগ্রামবাসী তাদের ক্ষতচিহ্ন মোছার প্রতীক্ষায় আছে। তাকে দ্রুত ফাঁসি দেয়া হোক। আর লাশ যেন চট্টগ্রামে না আসে সেই ব্যবস্থা করা হোক। লাশ চট্টগ্রামে এলে চট্টগ্রামবাসী সেটা প্রতিরোধ করবে।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ সভাপতি সুনীল ধর বলেন, সালাহউদ্দিন কাদেরকে স্বাধীন দেশের মাটিতে আর এক মুহুর্ত বাঁচার সুযোগ দেয়ার দরকার নেই। এদেশের আলো-বাতাসে তার আর এক মুহুর্তও বেঁচে থাকার দরকার নেই। নূতন সিংহ, মুজাফফর আহমেদসহ অসংখ্য মানুষকে সে হত্যা করেছে। তার ফাঁসি হলে চট্টগ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। চট্টগ্রামবাসীসহ পুরো জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং সালাহউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। দুই যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাবে কিনা সেটা জানতে দুই ম্যাজিস্ট্রেট শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেছে।