সাবরিনাসহ ৮ জনের ১১ বছর করে কারাদণ্ড

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত প্রতিনিধি,২০ জুলাই ২০২২ :  করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামির ১১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সময় বিচারক বলেন, ‘ডা. সাবরিনা-আরিফসহ অন্য আসামিরা করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে।  রাষ্ট্র যখন নাগরিকের করোনা পরীক্ষা বিনা মূল্যে করার দায়িত্ব নেয় তখন তারা করোনার ভুয়া পরীক্ষা করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। তারা মানুষদের করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিত।’

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন-আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।

তিন ধারায় আসামিদের শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় আসামিদের তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন আদালত। জরিমানা অনাদায় আরও তিন মাস কারাভোগ করতে হবে।

দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় চার বছরের কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায় আরও চার মাস কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া দণ্ডবিধি ৪৭১ ধারায় চার বছরের কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

জরিমানা অনাদায়ে চার মাস কারাভোগ করতে হবে। তিন ধারার শাস্তি একের পর এক চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭০/২৬৯/৪০৬/৪৬৫ ধারায় আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের এ ধারাগুলোতে খালাস প্রদান করেন আদালত।

রায় ঘোষণার আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসামিদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। রাখা হয় হাজতখানায়। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আদালতে উঠানো হয়।

গোলাপি শাড়ি পরে পরিপাটি সাজে সাবরিনা কারাগার থেকে আদালতে আসেন। কাঠগড়ায় ঢুকেই সাবরিনা মাটিতে বসে পড়েন। বিচারক রায় পড়া শুরু করলে সাবরিনা উঠে দাঁড়ান। সাবরিনাসহ অন্য আসামিরা মনোযোগ দিয়ে রায় শোনেন।

পরে রায়ের বিষয়ে সাবরিনার কাছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। দেশবাসী এক সময় জানবে সাবরিনা নিরপরাধ ছিল। এরপর কঠোর নিরাপত্তায় সব আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অন্য আইনজীবীরা হলেন-মকবুল হোসেন, আজাদ রহমান, এম মনিরুজ্জামান প্রমুখ। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা হলেন-এহসানুল হক সমাজী, প্রণব কুমার বড়ুয়া, আব্দুল জলিল প্রমুখ।

গত ২৯ জুন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৯ জুলাই দিন ধার্য করেন।

এর আগে ১১ মে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।

২০ এপ্রিল একই আদালতে সাক্ষ্য দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জন বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

২০২০ সালের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দেয়।

এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা হলে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।