ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ০৭ জুন ২০২২ : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন পুরোপুরি নেভানো না গেলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
কনটেইনার ডিপোতে রাখা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কন্টেইনারগুলো এরই মধ্যে আলাদা করা হয়েছে। সেখানে আরও কোন কনটেইনারে রাসয়নিক আছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন আর বড় ধরণের আগুন লাগার শঙ্কা নাই। এদিন ঘটনাস্থল থেকে আরও দুজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোটিতে কনটেইনার রাখার বেলায় ছিলো চরম অব্যবস্থাপনা। সেখানে কোনটি কাপড়ের আর কোনটি রাসায়নিকের কন্টেইনার, তেমন কিছুই লেখা ছিলো না।
সব পণ্যের কন্টেইনারই ছিলো মিলেমিশে একাকার। তবে সেখানে কাজ করা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ কনটেইনারে তৈরি পোশাক রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, সাধারণ পণ্যের সঙ্গে রাসায়নিক মিশে আগুনের তীব্রতা বেড়ে গিয়েছিলো। ডিপো কর্তৃপক্ষ রাসায়নিকের তথ্য গোপন করায় আগুনে প্রাণহানী বেড়েছে।
ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কনটেইনার ছিলো ২৭টি। গত দু’দিনেরও বেশি সময়ে ১৫টি চিহ্নিত করা গেলেও বাকি ১২টির হদিস মেলেনি।
এদিকে, মূল আগুনের জায়গা থেকে আরও দুটি মরদেহ শনাক্ত করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। এতে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩ জনে।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে এবং বিস্ফোরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, বিস্ফোরিত ১৫ কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পেয়েছি। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকতে পারে এমন আরও ১৫টি কন্টেইনার শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে সেসব কন্টেইনারে অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থও থাকতে পারে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সেগুলো আপাতত খুলছি না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করার পর সেগুলো খোলা হবে।
ডিপোতে দুর্ঘটনার সময় কনটেইনার ছিল চার হাজার ৩১৩টি। এরমধ্যে পণ্যভর্তি ছিল শতাধিক কনটেইনার, যার মধ্যে কমপক্ষে ২৭টিতে ছিল কেমিক্যাল।
এরমধ্যে বিস্ফোরণে ১৫টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকি ১২টি কনটেইনার নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হলেও সেগুলো এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।
আনিসুর রহমান বলেন, কনটেইনারে কেমিক্যাল থাকার বিষয়টি মালিকপক্ষ এখনো আমাদের নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কনটেইনার সরাতে বলেছি।
কাজ করতে গিয়ে যদি কনটেইনারের ভেতরে আগুন থাকে, তাহলে যতই বাইরে থেকে ফাইটিং করি তাতে কোনো লাভ হবে না।
কনটেইনার ঠান্ডা না করলে যদি পরিমিত তাপ থেকে যায়, তাহলে আবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সব দিক চিন্তা করে আমরা কাজ করছি।
কনটেইনার সরানোর ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল আছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কেমিক্যাল সরাতে গেলেও বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি আছে।
এখানে কেমিক্যাল, গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ আছে। ফিনিশড গুডস জাতীয় বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। যেগুলো আগুনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। সেগুলো দ্রুত সরাতে বলা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল জানান, ডিপোতে এখনও দুই একটি জায়গায় আগুন জ্বলছে।
জ্বলতে থাকা কনটেইনারগুলোর ওপর দিয়ে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে। তবে পুরোপুরি না নিভলেও আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। প্রায় ৬১ ঘন্টা পর আগুনকে বাগে আনা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মঙ্গলবার জানান, এখনো ২৮টি কনটেইনারের মধ্যে তাঁরা অনবরত পানি ছিটিয়ে চলেছেন। ২৮টি কনটেইনারের ভেতরে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে।
উত্তপ্ত হয়ে আছে কনটেইনারগুলো। এর মধ্যে রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনারও আছে। সেগুলো এখনো চিহ্নিত হয়নি। জ্বলতে থাকা কনটেইনারে পোশাক পণ্য আছে বলে মনে করছেন তারা।
এখনও তিন জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিখোঁজ রয়েছে। ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছাড়া অন্য কোন রাসায়নিক ছিলো কিনা তা খুঁজে দেখছে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল।