আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে বিরোধীজোটের সরব উপস্থিতি এবং নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমনে ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগকে বিশেষ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
পৌর নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ফলাফল সরকার পতনে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলেও ১৪ দলীয় জোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের মাঝামাঝিতে এটা অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তবে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় পৌরসভা নির্বাচনকে আমাদের অধিক গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।’
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। বাড়ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র নানা শঙ্কাও।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্বাচন সরকারের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচন নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। ওই নির্বাচনগুলোকে অনেকটাই একতরফা মনে করা হয়। আর এ কারণেই পৌরসভা নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করছে রাজনীতিক বিশ্লেষকেরা।
স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুজন-এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই নির্বাচন সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা না রাখলেও জাতীয় ইস্যু তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আগের নির্বাচনগুলোর কথা সবারই জানা। যেনতেনভাবে জিতে গিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকাই সমাধান নয়। সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারেই জাতিকে আটকে রাখতে চাইছে। সবাই এই বিচার চাই। তবে অন্য ইস্যুগুলো ধামাচাপা দিয়ে নয়। প্রতিনিয়ত জঙ্গিবাদের নিঃশ্বাস বাড়ছে। জঙ্গিবাদ ঠেকাতে জাতীয় ঐকমত্যের দরকার। নির্বাচন, ভোট, সুশাসন ব্যতিত কখনই জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এই প্রশ্নে পৌরসভার নির্বাচন সরকারের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।’
দলীয় প্রতীকে এবারের পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে প্রত্যাবর্তন করতে চাইছে। নির্বাচনে অযোগ্য হলেও জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে এই নির্বাচনে বিশেষ সখ্যতা রেখেই প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। বেশ কয়েকটি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে জামায়াতও তাদের উপস্থিতি জানান দিতে প্রস্তুত বলে প্রচার রয়েছে।
আরো প্রচার রয়েছে, নির্বাচনে জিতলে বিএনপি তার পক্ষের জনসমর্থন আছে দাবি তুলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। আর হেরে গেলে আগের নির্বাচনগুলোর মতো পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন তুলে আন্দোলনের ডাক দিতে পারে।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যকে অনেকেই বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন।
আওয়ামী লীগ নেত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্য আমাদের শঙ্কায় ফেলেছে। পৌর নির্বাচনের আগে এমন বক্তব্য বিশেষ অর্থবহন করে। আমরা তাদের বক্তব্যে হতাশ হয়েছি। নির্বাচনকে ভন্ডুল করতেই এমন আপত্তিকর মন্তব্য করে রাজনীতি উত্তপ্ত করতে চাইছে তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসায় আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কোনো প্রকার ছলচাতুরী না করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে এবং ফলাফল মেনে নেবে এটাই প্রত্যাশা করি। মাঠের রাজনীতিতে যে কোনো ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান ডা. দীপু মনি।
এদিকে, নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়েও বেকায়দায় আওয়ামী লীগ। শত চেষ্টা করেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার দলীয় সংগঠনটি। সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এসব প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য নিজ দলের বিদ্রোহীরাই বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করা হচ্ছে।
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নানা কারণেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে বড় দল হিসেবে সমস্যা কিছুটা থাকতেই পারে। তবে এই নির্বাচনেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিই বিজয়ী হবে।’
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।