সংগীত শুধু বিনোদন নয়, সমাজ ও জাতিকে পরিবর্তনের হাতিয়ারও: ফকির শাহাবুদ্দিন (ভিডিও)

SHARE
সংগীত শুধু বিনোদন নয়, সমাজ ও জাতিকে পরিবর্তনের হাতিয়ারও: ফকির শাহাবুদ্দিন

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২ : লোকসংগীত, বাউল ও সুফি গানের শিল্পীদের মধ্যে একজন ফকির শাহাবুদ্দিন। শুরুটা গণসংগীত দিয়ে হলেও শাহ আবদুল করিমের সান্নিধ্যে আসার পর বাউল গানেও নিয়মিত দেখা যায় তাকে। এরপর তিন দশক ধরে লোক গানও করছেন তিনি। এছাড়া ১৯৭৮ সাল থেকে নিয়মিত গান লিখেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। সম্প্রতি ‘চ্যানেল 24 অনলাইন’-এর সঙ্গে গান ও সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেছেন এই শিল্পী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহজাদা সেলিম রেজা—

✪ প্রথমেই ঈদ নিয়ে কিছু বলবেন…
ঈদ বরাবরই ভালো কাটে আমার। আল্লাহ যখন যেমন দিন দেন তখন তা নিয়েই শোকর করি। আর এর আগে করোনা ছিল। আল্লাহ যখন ভালো মনে করেছেন তখন করোনা তুলে নিয়েছেন। মানুষের হাতে তো কিছু নেই, সবই প্রকৃতির উপর।

ঈদের দিন ছেলের সঙ্গে ফকির শাহাবুদ্দিন (১৪ মে, ২০২১ইং - ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

ঈদের দিন ছেলের সঙ্গে ফকির শাহাবুদ্দিন (১৪ মে, ২০২১ইং – ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

✪ ছোট বেলায় কেমন কাটতো ঈদ?
ছোট বেলায় মা-বাবা নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতেন। সেসব পরতাম, ভালো লাগতো। কিন্তু এখন তো বড় হয়েছি। বড় হওয়ার পর যখন বুঝলাম ঈদ তো আমার জন্য না, ঈদ হচ্ছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আনন্দের বিষয়। শুধু নিজের ভালো লাগা না। তবে মানুষকে দিতে ভালোবাসি আমি।

✪ গণসংগীতের শুরু কীভাবে?
আমরা এমন একটা পরিবেশ নিয়ে বড় হয়েছি, ওই যে— ‘ক্রান্তি লগ্নে জন্মেছি, যুদ্ধে যুদ্ধে বড় হয়েছি’। সেখান থেকে প্রতিবাদী মনমানসিকতা। আমাদের মূখ্য ভূমিকা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। এখনো গণসংগীত করি। যখন অন্যায় দেখি তখন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গান করি।

ফকির শাহাবুদ্দিন

ফকির শাহাবুদ্দিন

✪ বাউলে আসার গল্প জানতে চাই…
বাউলে চলে আসার পেছনে আমার বন্ধু রবী ঠাকুর। ওর মাধ্যমে বাউল শাহ আব্দুল করিমের সঙ্গে দেখা হয়। সিলেটে একটি প্রোগ্রামে পরিচয় হয় আমাদের। তারপর উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ বছর তাদের সান্নিধ্যে থাকা। সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়া শুরু। আরও একটু বলতে চাই, বাউল এবং গণসংগীত দুটোই একই সংস্কৃতির। বলা যায় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

✪ এ সময়ে গণসংগীত কতটা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
আমি ১৯৮৫ সাল থেকে গণসংগীত করি। এর প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে বলব, যতদিন পৃথিবীতে  মানবজাতি বসবাস করবে ততদিন কিছু অন্যায় হবে, ভুল হবে। তাই মানবজাতি পর্যন্ত গণসংগীত থাকবে। গণসংগীতের অর্থ কিছুর বিরুদ্ধাচরণ করা নয়। এটা হলো গানে গানে মানুষকে দেখিয়ে দেয়া— তোমার বোধ হয় এটা ভুল হচ্ছে। এটা করা ঠিক নয়। আমরা সরাসরি কখনো কিছু বলি না।

ফকির শাহাবুদ্দিন

ফকির শাহাবুদ্দিন

✪ শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে আপনার ভালো সম্পর্ক ছিল…
আমিই প্রথম সিলেটি তারকা যিনি শাহ আবদুল করিমের গান করি। তার গান হচ্ছে মাটি ও মানুষের গান। তিনিও এক সময় গণসংগীত করতেন। তিনি চোখে যখন যা দেখতেন সেটাই লিখতেন।

✪ ১৯৭৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গান লিখছেন….
গান লেখাটাও গণসংগীত দিয়ে শুরু আমার। অনেক গণসংগীত লিখেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি এই বাংলাতে বাস করি, সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি বাঙালি’, ‘রাস্তায় যারা বসত করে রাস্তায় বাড়ি-ঘর’, এরশাদ সরকারের আমলে লিখলাম ‘কেউ বলে পথকলি কেউ বলে টোকাই, আমাদেরও নাম আছে নাম ধরে ডাকার মতো মানুষ তো আর নাই’। এই গানটি কনক চাপাকে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু আমি আমার প্রথম অ্যালবামের এই গানটি ফিল্মে গেয়েছিলাম।

ফকির শাহাবুদ্দিন

ফকির শাহাবুদ্দিন

✪ নতুনরা অনেকে গান লিখে কিন্তু কিছুদিন পর তা শোনা যায় না…
আমাদের সময় ছিল সংগ্রামের মাধ্যমে বেঁচে থাকা। এখন তো সেই সংগ্রাম নেই। আসলে কারো জীবনে যদি সংগ্রাম ও অভাব না আসে তাহলে সে শিল্পী, সাহিত্যিক বা যাই বলা হোক না কেন, সে সঠিক পর্যায়ে আসতে পারবে না বলে মনে করি আমি। দারিদ্র কিন্তু প্রধান কারণ। এ জন্যই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান। তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান’। এখনকার নতুনরা তো সেই দারিদ্রতা, বাস্তবতা দেখেইনি। তারা কীভাবে গভীরে গিয়ে মানুষের মনের কথা লিখবে। তারা তো দেখছে দু’জন ছেলে-মেয়ে সুন্দরভাবে চলা-ফেরা করছে। সেটা নিয়েই তারা লিখছে। পরিবেশ হচ্ছে প্রধান।

✪ কাওয়ালী গানও করেন; এ নিয়ে কিছু বলবেন?
আমি বাংলা কাওয়ালী করি। আমার জানামতে প্রথম বাংলা কাওয়ালী আমিই মনে হয় গেয়েছি।  যদিও সময়টা নির্দিষ্ট করে মনে নেই।

✪ নিজের নামে ফাউন্ডেশন করতে চেয়েছিলেন…
ফাউন্ডেশন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু করোনার কারণে তা আর হয়নি। করোনার সময় কোনো কাজ করা হয়নি। ফাউন্ডেশন করতে গেলে তো টাকার প্রয়োজন। কিন্তু করোনার পরিস্থিতিতে তো সবই থমকে ছিল। এখন আবার কাজ করব, কিছু টাকা জমাব। নিজের টিকে থাকার পর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যেতে হয়।

✪ নতুন যারা গায় তাদের সম্পর্কে কিছু বলবেন?
নতুনরাও অনেকে ভালো করছে। তাদের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। হয়তো মাঝে মধ্যে কিছু ভুল করবে, কিন্তু তা আবার ওরা নিজেরাই ঠিক করে নেবে। একজন শিল্পীর যদি চল্লিশ বছর বয়স না হয় তাহলে তিনি সব পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেন না। চল্লিশ হলেই হয়তো পরিপক্ব হতে পারেন। তখন নিজের ভুল নিজেই সংশোধন করতে পারবেন। আর সংগীত নিয়ে একটা কথা বলতে চাই…

✪ হ্যা, বলেন…
সংগীত শুধু বিনোদনই নয়। এটি সমাজ, জাতি, নিজেকে ও অপরকে পরিবর্তনের হাতিয়ারও বটে।