ভালোবেসে বিয়ে করায় স্বামীর নামে মিথ্যা মানব পাচারের মামলা (ভিডিও)

SHARE
ভালবেসে নিজের পছন্দে বিয়ে করায় স্বামীর নামে মানব পাচারের মামলা

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আদালত প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল ২০২২ : সত্যিকার ভালোবাসার গল্পগুলো বুঝি এমনই হয়। শৈশবে মা-বাবার সান্নিধ্য না পাওয়া কন্যাটি বড় হয়, আত্মীয়ের কাছে। নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে চাইলে আসে, পাহাড়সম বাধা। আর বিয়ের পর স্বামীকে জেলে পাঠানো হয়, মিথ্যা মামলায়। তবুও হার মানেনি তারা।

দিশা। ৪ মাস বয়সেই হারিয়েছেন বাবাকে। মাও অন্যত্র বিয়ে করে ছেড়ে গেছেন তাকে। তারপর থেকে দিশা বড় হন দাদা-দাদির কাছে।

জীবন চলার পথে দিশার দেখা হয় সেতুর সঙ্গে। বন্ধুত্ব থেকে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু, তাতে বাধ সাধেন দিশার দাদা-দাদি। সেতুর বিরুদ্ধে সম্পত্তির লোভের অভিযোগ তোলেন তারা। তাই শেষমেশ, পরিবারের অমতেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় এই জুটি।

কিন্তু, এই সম্পর্ক ভাঙতে দিশার স্বামী সেতুর বিরুদ্ধে দেয়া হয় মানবপাচারের মামলা। যাতে মাসখানেক জেলও খাটতে হয় তাকে। সেতু বলেন, মানবপাচারের মত জঘন্য কাজের সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমি সঙ্গীত নিয়ে কাজ করি, ইউটিউবে চ্যানেল আছে, কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গীত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করেছিলাম। আমার আশপাশের সবাই জানে আমি এমন কাজ করতে পারি না। আমরা দুইজন ভালোবেসে দুইজনকে বিয়ে করেছি। আর এই একমাস আমি যতটা কষ্ট করেছি আমার স্ত্রীও ঠিক ততটাই কষ্ট করেছে।

আর দিশা বলেন, আমার দাদী আমাকে বড়লোক একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি সবসময় চেয়েছি এমন একজনকে বিয়ে করতে যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। বিয়ে করে আমি মনে হয় আমার ছোটবেলা ফিরে পেয়েছি। আমার শাশুড়ি মা আমাকে অনেক বেশি আদর করেন। একদম বাচ্চাদের মতো করেই আমাকে ট্রিট করেন।

পরে স্বামীর নামে মিথ্যা মামলা খারিজের আবেদন করেন দিশা। হাইকোর্ট একান্তে সব কথা শুনে রায় দেন- দুজনের সম্পর্কে বাঁধা হতে পারে না আইন।

আদালত বলেন, কেউ কাউকে জোর করতে পারবে না, কে কাকে বিয়ে করবে বা করবে না। প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে যেহেতু তারা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছেন আদালত সেটাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা দিশাকে জিজ্ঞেস করেছি যে সে সুখে আছে কিনা, ভালো আছে কিনা। সে জানিয়েছে সে সুখে আছেন, তাই আদালত আশা করছেন এটার একটা সুন্দর সমাধান হয়ে যাবে।

শৈশব-কৈশোরের ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে যখন নিজের মতো করে সুখ খুঁজে নিতে চেয়েছিল দিশা, তখন তাকে চিনতে হলো আদালতের বারান্দা। তবে বিচারকের মহানুভবতায় জীবনের নতুন দিশা খুঁজে পেলো সংগ্রামী দিশা-সেতু জুটি।