ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২২ মার্চ ২০২২ : বারো বছর বয়সে মেয়েটির জন্মগত ‘নারীত্ব ত্রুটি’ ধরা পড়ে। দেশে ও বিদেশে অনেক চিকিৎসা, একাধিক অস্ত্রোপচারেও সেটি সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
বিয়ে, সন্তান জন্মদানের চিন্তা বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি ছিল মেয়েটি ও তার পরিবারের। অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজে হওয়া কয়েকজন চিকিৎসকের সফল অস্ত্রোপচারে সেই মেয়েটি এখন পূর্ণাঙ্গ নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।
চিকিৎসকদের ভাষায়, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়েটির ভেজাইনাল এজেনেসিস বা মাসিকের রাস্তা অনুপস্থিত থাকা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকের ফুলের পর্দা (এমনিওগ্রাফট) প্রতিস্থাপন করে তার মাসিকের রাস্তা পুনর্গঠন করে মেয়েটিকে নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন মেয়েটি বিয়ে করার উপযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সন্তান ধারণও করতে পারবেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
শনিবার (২১ মার্চ) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রনজিৎ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. আবু সাঈদ।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফৌজিয়া আখতার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক নাসিমা আক্তার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ধীতপুর গ্রামের ২১ বছর বয়সী ওই মেয়ে এখন আনন্দে আত্মহারা। নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর সে। চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মেয়েটি।
পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২ বছর বয়সে পেটে ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসকের কাছে যায় মেয়েটি। ওই সময় মাসিকের রাস্তায় ত্রুটি দেখা ধরা পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ৭ বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। তবে এতে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি সে। এরপর ঢাকার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন থেকে অনিয়মিত মাসিক শুরু হয়।
মেয়ের বাবা জানায়, সৌদি আরব, ওমান ও জর্ডান পাঠানো হয় তার মেয়েকে। উদ্দেশ ছিল, কাজের পাশাপাশি যেন সেখানে গিয়ে চিকিৎসা পায়। তবে অভিভাবক না থাকায় সেখানকার কোনো হাসপাতালের চিকিৎসকরাই ঝুঁকি নিতে চাননি। অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসে সে।
চিকিৎসক রনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘জন্মগতভাবেই ওই মেয়ের মাসিকের রাস্তা বন্ধ ছিল।
মিস সুমা আক্তার মাসিকের রাস্তার জন্মগত ত্রুটি নিয়ে তার ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ভুগতেছিল। তার জন্মগত ত্রুটি ধরা পরে তার ১২ বছর বয়সে। সে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন গাইনি চিকিৎসককে দেখান এবং এখানে মাসিকের রাস্তায় পর্দা মনে করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু অপারেশন করতে গিয়ে অনেক জটিলতা দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেলে অপারেশন করতে গিয়ে মুল সমস্যা মাসিকের রাস্তা সমাধানে ব্যর্থ হয় এবং শুধু জরায়ুর ভিতর জমানো রক্ত পেট কেটে বের করে দেয় এবং মাসিকের রাস্তায় একটি ক্যাথেটার দিয়ে আসে। যতদিন (তিন মাস) ক্যাথেটার ছিল ততদিন ভালো ছিল। এরপর আবার মাসিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ৫ মাস পরেই রুগী খারাপ হলে তার আত্মীয়রা ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন গাইনি অধ্যাপক দিয়ে অপারেশন করান এক্ষেত্রেও রুগী তিন বছর ভালো থাকে এবং আবার জটিলতা দেখা দেয়। রুগী এ অবস্থায় সৌদি আরব কাজে যায় এবং সেখানে চিকিৎসা করাতে চেষ্টা করেন কিন্তু অপারেশন অনেক বড়ো বিধায় তারাও দায়িত্ব নিতে চায়নি।
৫ মার্চ মেয়েটি এখানে এলে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ভেজাইনার অংশে মাংস কেটে সেখানে নবজাতকের ফুলের পর্দা (এমনিওগ্রাফট) প্রতিস্থাপন করে তার মাসিকের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে স্থায়ীভাবে তার মাসিকের রাস্তা তৈরি হয়েছে। এখন মেয়েটি বিয়ে করে স্বামীর সংসার করাসহ সন্তান জন্ম দিতে পারবে। বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েটিকে কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।