উদ্ধারকৃত দেশীয় অস্ত্র (বামে) ও মোশাররফ ওরফে লম্বু মোশারফ (ডানে)
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : শুরুটা বেবিট্যাক্সি চালক হিসেবে। এক পর্যায়ে নাম লেখান ছিনতাইকারীর খাতায়। পরবর্তীতে চুরি-ডাকাতিতেও জড়িয়ে পড়েন। তবে সাভার-আমিনবাজার-কেরানীগঞ্জ-তুরাগ এলাকায় আতঙ্ক গাংচিল বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এই বাহিনীর হয়ে চলতে থাকে একের পর এক সংগঠিত অপরাধ। ২০১৭ সালে বাহিনী প্রধান আনারের মৃত্যুর পর গাংচিল বাহিনীর এক অংশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মোশাররফ ওরফে লম্বু মোশারফ। বাড়তে থাকে অপরাধের দৌরাত্ম।
ছিনতাই, ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন মোশাররফ। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি পুলিশ সদস্যও। কয়েক দফা কারাভোগ করেছেন। তবে জামিনে বের হয়ে ফিরে গেছেন সেই আগের পেশায়। আবারও রবিবার রাতে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-২ এর কাছে লম্বু মোশাররফ মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন তার পাঁচ সহযোগীসহ।
র্যাব বলছে, তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৪ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৩টি বড় ছোরা, ২টি চাপাতি, ২টি চাকু, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি দা, একটি ফ্রেমসহ হেসকো ব্লেড, একটি গ্রীল কাটার, একটি কাটার প্লাস, ৪২৩ পিস ইয়াবা, ৫টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- বিল্লাল হোসেন, মোহন বাইক মোহন, সাহাবুদ্দিন সাবু জলদস্যু সাবু, রুবেল ডাকাত রুবেল ট্রলার রুবেল ও সুমন মিয়া সুমন হোসেন।
আজ সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মারামারিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সময় ভুক্তভোগীকে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার কারণে ‘গলাকাটা মোশারফ’ হিসেবে পরিচিতি পান মোশাররফ। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, অপহরণ, পুলিশের উপর হামলাসহ ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগও করেছেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও ওপর হামলা করতো মোশাররফ বাহিনীর সদস্যর। র্যাব-পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা ও খুনের মামলা রয়েছে মোশাররফ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। দলের সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০ জন। ভাটা মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করতো। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে লম্বু মোশারফের বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত; চাঁদা না পেলে তার বাহিনীর সদস্যরা রাতের আধারে নিরাপত্তা কর্মীকে প্রহার, নির্মাণ কাজের উপকরণ জোরপূর্বক নিয়ে যেতো। আধিপত্য বজায় রাখাসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে লম্বু মোশারফ গ্রুপের সদস্যরা একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করতো।
জানা গেছে, লম্বু মোশারফ ভোলার বোরহানউদ্দীন উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৯০ সালে সে ঢাকায় আসেন। প্রথমে বেবি ট্যাক্সি ও সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরে একটি হাউজিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। ২০০০ সালে রাজধানী কাফরুল থানাধীন এলাকায় ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। পরে গাংচিল বাহিনীর প্রধান আনারের মাধ্যমে গাংচিল বাহিনীতে যোগ দেন।
গ্রেফতার চোরা বিল্লাল ২০০৬ সালে মুন্সিগঞ্জ থেকে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। প্রথমে গার্মেন্টসে পরে গাড়ির হেলপারের কাজ করেন। ২০১৭ সালে লম্বু মোশারফের সঙ্গে পরিচয় ও অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পান। সিধকাটা, গৃহস্থলীর তালা ভাংগাসহ অন্যান্য চৌর্যবৃত্তিতে পারদর্শীতার কারণে ‘চোরা বিল্লাল’ হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১০টি মামলা রয়েছে।