ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ; ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ১২৮ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সরকার বদলে দেবে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা। এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। সময় নষ্ট না করে দ্রুতই বাকি রুটের কাজ শুরু করা দরকার বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক।
২০৩০ সালের মধ্যেই ছয়টি রুটে দ্রুতিগতির মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাবে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা। যানজটে নাকাল ঢাকাবাসীকে মুক্তি দিতেই সরকার প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। যেখানে ৬৭ কিলোমিটার উড়াল এবং ৬১ কিলোমিটার পাতাল রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। যা রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের যানজট কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এটা যখন এই করিডোরে হয়ে যাবে, যারা বসবাস করছেন ডিফিনেটলি তারা একটা বড় সুবিধা পাবেন। ঢাকায় রাস্তার ওপর যে ছোট ছোট গাড়ির চাপ, তারা যদি ছোট গাড়ি ছেড়ে দিয়ে মেট্রোতে ওঠেন। তাহলে নিচের রাস্তাটা ফাঁকা হলে যানজট কমার বড় একটা সুযোগ রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সমন্বয় করতে হবে।
ইতোমধ্যে লাইন-ছয়ের আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের কাজ শেষের পথে। এরপরেই লাইন এক ও পাঁচের কাজও শুরু হবে চলতি বছর। ২০২৬ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে মেট্রো রুট-১ নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এখানে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত এলিভেটেড হবে। আমিনবাজার থেকে এটা ভাটারা পর্যন্ত যাবে, এটা কিন্তু মাটির নিচ দিয়ে যাবে। তবে এমআরটি লাইন-১ কাজ শুরু হয়ে গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরোটাই আন্ডারগ্রাউন্ড হবে। এটা পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত কানেক্ট হবে। এই অংশটি ওপর দিয়ে যাবে। এমআরটি লাইন-টু হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে। জাপানের একটি কোম্পানি এটা বাস্তবায়ন করবে। এটার সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্নের পথে।
এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে মেট্রো রুট-২ এবং মেট্রো রুট-৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান সচিব।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। সাহসী একটা পদক্ষেপ। বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছয়টা মেট্রোরেলে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা এই লাইনগুলোর কাজ সম্পন্ন করব।
সড়ক, নৌ ও রেলপথের সমম্বয়ে ঢাকায় একটি পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বড় সুযোগ রয়েছে। যেখানে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়ে যাবে নগরবাসীর জন্য। খেয়াল রাখতে হবে মেট্রোটা কিন্তু ভেরি ক্যাপিটাল ইন্টেন্সিভ একটা ইনফ্রাক্টাকচার। এটা একা গণপরিবহন সম্পর্কিত যে চাহিদা আছে, তা নিতে পারবে না। সে হবে একটা ইকো। গণপরিবহন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেট্রো। তার নিচে থাকে বিআরটি। তার নিচে থাকে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ। তার নিচে থাকে অর্ডিনারি প্যারা ট্রানজিটগুলো। আমরা এখন ওপরেরটার আয়োজন করে ফেলছি। তবে নিচেরটা থেকে যেন আমরা দৃষ্টি সরিয়ে না নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে এখন থেকে কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিপুল পরিবহন চাহিদা সে নিতে পারবে বলা হয় নাই। এখানে আরও পাঁচটা হওয়ার কথা। এই নেটওয়ার্কটা যদি হয়ে যায়, তখনই যানজট দূর করা, বসবাসযোগ্য নগরীর হিসাবে বলি একটা দৃশ্যমান উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাবে।
তবে প্রকল্প চলাকালে এমআরটি লাইন-ছয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে ডিএমটিসিএলের প্রতি আহ্বান এই বিশেষজ্ঞর।