ইয়াদ আলী মোল্লা
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,রোববার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাশাপাশি এলাকার দুটি স্কুল থেকে তিন দিনের ব্যবধানে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ধরন প্রায় অভিন্ন হওয়ায় এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় পুলিশ। রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামলেও মিলছিল না ক্লু। শেষ পর্যন্ত জানা গেল, এই খুনের পেছনে ইয়াদ আলী মোল্লা! গত ১০ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পোড়াহাটী গ্রামে এক মধ্যবয়সী নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জনতা হাতেনাতেই ধরেছিল তাকে। সেই মামলার রিমান্ডে বেরিয়ে এসেছে ক্লু-লেস দুই খুনের রহস্য।
পুলিশ বলছে, ৩৬ বছর বয়সী ইয়াদ মোল্লা একজন সিরিয়াল কিলার। বিকৃত যৌনাচারে বাধা পেলেই সে খুন করে। ঝিনাইদহে মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে তিনজনকে অভিন্ন উপায়ে খুন করে সে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মো. সোহেল রানা সমকালকে বলেন, ৩৬ বছর বয়সী ইয়াদ মোল্লার বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার বিল ডুমুরতলায়। গত পাঁচ মাস আগে সে ঘুরতে ঘুরতে ঝিনাইদহে আসে। ঝিনাইদহেই বিকৃত যৌনাচারে বাধা পেয়ে এ পর্যন্ত তিনটি খুনের কথা স্বীকার করেছে।
তদন্ত সংশ্নিষ্ট পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ইয়াদ মোল্লা বিয়ে করেছিল দুটি। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় এক বিয়েও টেকেনি। এরপর সে ভবঘুরে হয়ে যায়। ঘুরতে ঘুরতে ঝিনাইদহে গিয়ে তার ভয়ংকর রূপ বেরিয়ে আসে। তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার তেঁতুলতলা এম কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে ইলিয়াস পাটোয়ারী (৬৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভবঘুরে ওই ব্যক্তির মাথায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় থানায় হত্যা মামলা নেওয়া হয়। এর তিন দিনের মাথায় ৯ ফেব্রুয়ারি একই এলাকার লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিঁড়িঘরের নিচ থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ে ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী ভবঘুরে ওই ব্যক্তির মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। লাশটি অনেকটা পচে যাওয়ায় এবং পরিচয় না পাওয়ায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। ওই দুই ঘটনার তদন্ত চলার মধ্যেই পোড়াহাটী গ্রামে বিবিজান নেছা (৫৫) নামে এক নারীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার পর পালানোর সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় ইয়াদ মোল্লা নামে ওই যুবককে। এর পরই বের হতে থাকে আগের দুই হত্যা-রহস্য। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পোড়াহাটী গ্রামে বিবিজান নেছার বাড়িতে ঢুকেছিল ইয়াদ মোল্লা। তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তখন ওই নারী বাধা দিলেও তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর নৃশংসভাবে তার দুই হাত ভেঙে ইট দিয়ে মুখ ও মাথা থেঁতলে হত্যা করে ইয়াদ মোল্ল্লা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় প্রতিবেশীরা তাকে আটক করে র্যাবের হাতে তুলে দেন। ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলার জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সিরিয়াল কিলার ইয়াদ মোল্লার ভয়ংকর রূপ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পৃথক দুটি স্কুল থেকে উদ্ধার করা মরদেহে হত্যার ধরন প্রায় এক হওয়ায় সন্দেহ হয়েছিল। এ নিয়ে ইয়াদ মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ওই দুই হত্যাকাণ্ডেও সে জড়িত বলে স্বীকার করে। এরপর তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াদ মোল্লা জানিয়েছে, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘুরতে ঘুরতে সে এম কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় যায়। সেখানে এক ব্যক্তিকে (ইলিয়াস পাটোয়ারী) ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তার সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের চেষ্টা করে। তাকে বাধা দিলে স্কুলের টিউবওয়েলের হাতল দিয়ে মাথায় আঘাত করে সে চলে যায়। একইভাবে আরেকটি স্কুলের সিঁড়ির নিচে অন্য এক ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে একই কাজ করার চেষ্টা চালায়। তখন তাকেও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
সদর থানার ওসি শেখ সোহেল রানা বলেন, স্কুল প্রাঙ্গণে খুন হওয়া দুই ব্যক্তিই ভবঘুরে ছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয়ে ব্যক্তির লাশটি ৯ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করা হলেও তাকে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে হত্যা করা হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুরুতে ওই ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের মাধ্যমে তার পরিচয় মিলেছে। ওই ব্যক্তির নাম সালাউদ্দিন মিয়া (৪০)। বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে। ওই ঘটনাতেও পৃথক হত্যা মামলা হবে।
ওসি বলেন, ইয়াদ মোল্লা মাদক সেবন করে বিকৃত যৌনাচার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে হানা দিত বলে মনে হচ্ছে। সে নিয়মিত গাঁজা সেবন করত। দুই স্ত্রী চলে যাওয়ার পর মানসিকভাবে সে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। সবসময় বিকৃত শব্দ দিয়ে গালাগাল করত।